ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের শাহ্ আরেফিনের (রহ.) মাজারে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডসহ সবধরনের গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে তাহিরপুরের লাউরেরগড় গ্রামের শাহ্ আরেফিনের (রহ.) মাজার আঙ্গিনায় এ সংক্রান্ত একটি ব্যানার লাগিয়েছে মাজার পরিচালনা কমিটি।
ওই ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে- মোকাম এলাকায় এখন থেকে সবধরনের গান-বাজনা, মাদকসেবন, সাপ্তাহিক ওরসসহ অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে।
এদিকে, মাজারে অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও সবধরনের গান-বাজনা বন্ধ ঘোষণায় খুশি গ্রামের সচেতন মহল। স্থানীয় বাসিন্দা রোকম মিয়া বলেন, মাজারে গান-বাজনা সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করায় খুশি হয়েছি। মাজারে বাদ্যযন্ত্র দিয়ে গান করা মোটেও ঠিক না। এছাড়া আমরা দেখেছি গান-বাজনার আড়ালে মাদকের ব্যবসা করা হয়। যুব সমাজ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে যায়। একজন মানুষ হিসেবে এটা কোনোভাবে সমর্থন করা যায় না।
জানা যায়, ১৩০৩ খ্রিঃ হযরত শাহজালাল মোজাররদ ইয়ামেনী (রহঃ) সিলেটে আগমন করেন এবং তার অন্যতম সঙ্গ ছিলেন হযরত শাহ আরেফিন (রহঃ)। তিনি তরফ বিজেতা বারো আওলীয়ার অন্যতম ছিলেন। এক সময় তিনি (সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়) লাউড় রাজ্যের লাউরেরগড় গ্রামের সীমান্তবর্তী অঞ্চল মেঘালয়ের পাহাড়ের উপরে আস্তানা স্থাপন করেন এবং ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে যান। শাহ আরেফিন (রহঃ) নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। আরেফদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করায় সম্ভবত তিনি এই আধ্যাতিক খেতাব লাভে সক্ষম হন।
তিনি ছিলেন অলৌকিক প্রভাব শক্তির অধিকারী একজন আদর্শ মানব। তার কীর্তিগাঁথা অলৌকিক কাহিনী সমূহ আজও মুরব্বিদের মুখেমুখে শুনে অবাক হতে হয়। সুদুর অতীতকাল থেকে অদ্যাবধি প্রতি বছরই পনাতীর্থ মেলার তারিখের সাথে সমঞ্জস্য রেখে অগনিত বাউল পাগল, ফকির, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধসহ পাহাড়ি বাঙালি নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ ফায়েজের আশায় হযরত শাহ আরেফিন (রহঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ দর্শন করার অনুমতি প্রদান করা হয়। ফলে লক্ষাধিক ভক্তের উপস্থিতিতে শাহ আরেফিন (রহঃ) এর ওরস হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও অত্যন্ত আকর্ষনীয়। যা বাস্তবে দর্শন না করলে কোন অবস্থায় অনুমান করা যাবে না। যুগযুগ ধরে এই ঐতিহাসিক কর্মকান্ড চলে আসছে।
ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরের চৈত্র মাসে মোকামে অনুষ্ঠিত ওরস উপলক্ষে প্রচুর ভক্ত ও পর্যটক ভিড় করেন সেখানে। কিন্তু হঠাৎ করে মাজার কর্তৃপক্ষ মাজার আঙ্গিনায় গান-বাজনা ও জিকির-আসগার নিষিদ্ধ করায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন সেখানের ভক্তরা।
স্থানীয় বাউল শিল্পী জাকির দেওয়ান বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই মোকামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করছি। কিন্তু মোকাম পরিচালনা কমিটি হঠাৎ গান-বাজনা নিষিদ্ধ করায় আমাদের সংস্কৃতিপ্রেমীরা হতাশ।
এব্যাপারে শাহ্ আরেফিন (রহ.) আস্তানা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আলম সাব্বির বলেন, সম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ও আস্তানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। শাহ্ আরেফিন (রহ.) আস্তানা নিয়েও এলাকায় নানা কথাবার্তা হচ্ছে। কেউ কেউ উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছেন। এসব কারণে মাজারে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা শান্তি চাই। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।