
ওয়াল নিউজ ডেস্ক
জাপানের গুরুত্বপূর্ণ দুই শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট পরমাণু বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। কার্যত, ওই হামলার পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়।
জাপানের তৎকালীন সম্রাট হিরোহিতো ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিলে আনুষ্ঠানিকভাবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা নিয়ে ‘গভীরভাবে অনুতপ্ত’ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দেশটির বর্তমান সম্রাট নারুহিতো।
আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
এই দিবস উপলক্ষে টোকিওর একটি সম্মেলনকেন্দ্রে বক্তব্য রাখেন নারুহিতো (৬৫)। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সম্রাজ্ঞী মাসাকো (৬১)। এ সময় জাপানের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
বক্তব্যে নারুহিতো ‘নতুন করে এক ধরনের গভীর শোক’ অনুভব করার কথা বলেন।
সর্বশেষ যুদ্ধে অসংখ্য মানুষের মূল্যবান জীবনের অবসান ঘটে। আমার চিন্তায় তারা ও তাদের পরিবারের শোকার্ত সদস্যরা আছেন’, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতের কথা স্মরণ করে আমি গভীর অনুতাপ অনুভব করছি। আমি সর্বান্তকরণে আশা করছি, আর কখনোই যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না।’
একই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। তিনি ‘যুদ্ধের বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার’ অঙ্গীকার করেন। তিনি কথা দেন, সবাই যাতে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের নিয়োজিত রাখে, তা নিশ্চিতে যুদ্ধ থেকে পাওয়া শিক্ষাকে তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত করবেন।
আগামী মাসে নারুহিতো, মাসাকো ও তাদের কন্যা সন্তান রাজকন্যা আইকো নাগাসাকি সফরে যাবেন। সেখানে পরমাণু বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে দেখা করবেন তারা এবং ওই ভয়াবহ হামলায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
টোকিওর কেন্দ্রে ইয়াসুকুনি স্মৃতিস্তম্ভের অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৯ শতকের পরবর্তী সময়ে ২৫ লাখ নিহত জাপানি সেনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে এই স্তম্ভটি নানা কারণে বিতর্কিত। ওই নিহত সেনাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীও আছেন।
সরকারি কর্মকর্তারা ওই স্মৃতিস্তম্ভ সফরে গেলেই বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা, ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির খবর পাওয়া যায়। মূলত জাপানি সেনাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এমন দেশের পক্ষ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এমন দেশের তালিকায় আছে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া।
প্রধানমন্ত্রী ইশিবা সশরীরে ইয়াসুকুনিতে না গেলেও প্রথা অনুযায়ী শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ইয়াসুকুনিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে যান। সে সময় তার এই উদ্যোগে বেইজিং ও সিউল থেকে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এমন কী, ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে, যা বিরল।
আজ ভোরে ইয়াসুকুনিতে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন জাপানের বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ও ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত শিনজিরো কোইজুমি। প্রতি বছরই তিনি এই প্রথা অনুসরণ করে আসছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইশিবার দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয়তাবাদী অংশের নেতা ও তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সানায় তাকাইচিও সেখানে ছিলেন। তাদের সঙ্গে বিরোধী দল ‘জাপানিজ ফার্স্ট’ এর নেতাকর্মীরাও ছিলেন।