• ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

হাফ ভাড়ার দ্বন্ধে সুবিপ্রবি’র প্রক্টর-শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, সড়ক অবরোধ

The Wall News.Com
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
হাফ ভাড়ার দ্বন্ধে সুবিপ্রবি’র প্রক্টর-শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, সড়ক অবরোধ

নোহান আরেফিন নেওয়াজ, শান্তিগঞ্জ


বাসের হাফ ভাড়া নিয়ে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বাস কন্ট্রাক্টরের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

এসময় বাসে উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সেখ আব্দুল লতিফ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলে তাঁর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ওই বাস কন্ট্রাক্টর।

ঝামেলা মিটিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের (শান্তিগঞ্জস্থ সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট) সামনে বাস থেকে নামার সময় ফের প্রক্টর আব্দুল লতিফকে কটু কথা বলায় তর্কে জড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আল নাহিয়ান নূর ও ওই বাস কন্ট্রাক্টর। এসময় উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থী নাহিয়ানকে বাস কন্ট্রাক্টর ধাক্কা দিলে বাসের জানালার গ্লাসে হাত লেগে রক্তাক্ত হন শিক্ষার্থী নাহিয়ান । ডান হাতে সেলাই দিতে হয় ৮টিরও বেশি।

সহপাঠীর এমন অবস্থা দেখে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের সাথে এমন অসৌজন্যমুলক আচরণে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। সকলেই নেমে পড়েন রাস্তায়। বন্ধ হয়ে যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সব ধরণের যান চলাচল। দুই পাশে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের।

খবর পেয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আধাঘন্টার প্রচেষ্টায় অববোধ তুলে নিতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা। এরপর সুবিপ্রবির অফিসে আলোচনায় বসে পরিবহণ শ্রমিক নেতাদের কাছে ৬ দফা দাবি জানিয়ে বিকাল ৪টার মধ্যে এই ঘটনার সমাধান চান তারা। না হলে বিকালে আবারো আন্দোলনে নামার হুমকি দেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের (শান্তিগঞ্জস্থ সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট) সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। শিক্ষার্থীকে আহত করার ঘটনায় ও পরিবহণ চালকদের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুবিপ্রবির পদার্থ বিজ্ঞানের ডিন অধ্যাপক হারুনুর রশিদ।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকেই  আমরা দাবি করে আসছি, সুবিপ্রবির সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক করতে হবে। সারাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাফ পাশ আছে। আমাদেরও থাকতে হবে। ইতোমধ্যে পরিবহণের মালিক সমিতিসহ সবখানেই আমরা এই দাবি করেছি। পরিবহণ শ্রমিকরা হাফ পাস বললে আমাদের সাথে তর্ক করে, ঝগড়া লেগে যায়, কটু কথা বলে। মেয়েদের সাথে বিশ্রি আচরণ করে। এটা আমরা এতোদিন সহ্য করে এসেছি। আজ আমাদের প্রক্টর স্যারসহ বাসে আসার পথে ভাড়া নিয়ে তর্ক শুরু করে কন্ট্রাক্টর। বলে, আমাদেরকে গাড়ি থেকে নামতে দেবে না। প্রক্টর স্যারের সাথেও বেয়াদবি করেছে। টেক্সটাইলের সামনে এসে নামিয়ে দেওয়ার সময় কন্ট্রাক্টর বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। স্যার কথা বলে আমাদেরকে বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে আসার সময় সহপাঠী নাহিয়ানের উপর হামলা করে কন্ট্রাক্টর। সে গুরুতরভাবে আহত হয়। হাতে ৮টিরও বেশি সেলাই দিতে হয়। শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়েছে। তারপর সকলেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। রাস্তা অবরোধ হয়। স্যাররা আশ্বস্ত করেছেন, দ্রুত এর সমাধান দিবেন। পরিবহণের দুই নেতা এসেছিলেন। ডিন স্যার, প্রক্টর স্যার, অন্যান্য স্যার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের সামনে আমরা তাদের কাছে ৬টি দাবি তুলে ধরেছি। আজ বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে অভিযুক্ত ড্রাইভার, কন্ট্রাক্টরকে ইউনিভার্সিটিতে এসে সবার সামনে ক্ষমা চাইতে হবে। স্যারের সাথে বেয়াদবির জন্য আলাদা করে স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

আহত শিক্ষার্থী আল নাহিয়ান বলেন, আমাদের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে- ২৪ ঘন্টার মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে সুবিপ্রবির সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হাফপাশ নিশ্চিত করতে হবে। সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাথে মার্জিত আচরণ করতে হবে। প্রতি বাসে হাফপাশের লিফলেট টাঙাতে হবে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা একজন হলেও বাস দাঁড়িয়ে থেকে তাকে নিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্যারের সাথে ঘটনাটি ঘটে। বাজে আচরণ করে তখন আমি প্রতিবাদ করি। স্যার আমাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার সময় পেছন থেকে আমার উপর হামলা করে।

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সেখ আব্দুল লতিফ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। বাসের কন্ট্রাক্টর বেয়াদবি করেছে। ছেলেরা উত্তেজিত হওয়ার পর আমি তাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় নাহিয়ানের উপর হামলা করে বসে। ছেলেটা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এর সুষ্ঠু সমাধান দরকার। আর আমাদের ছেলেমেয়েদের যে দাবিগুলো আছে তা-ও তো যৌক্তিক।

সুবিপ্রবি’র পদার্থ বিজ্ঞানের ডিন অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, এটা অত্যন্ত উদ্বেগের কথা। হাফ পাস চাইলে ছেলেদের উপর হাত তুলতে হবে কেনো। এটা চরম অন্যায় হয়েছে। আশা করছি পরিবহণের নেতারা আজ বিকালের মধ্যেই এর সুষ্ঠু সমাধান করবেন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা ঘটনাস্থলে চলে এসেছি। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তার অবরোধ আধাঘন্টার ভিতরেই তুলে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা খুবই মার্জিত আচরণ করেছে। বাস কন্ট্রাক্টর যা করেছে তা মোটেও উচিত হয়নি। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে যাবো আশা করছি।

সুনামগঞ্জ পরিবহণ শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল হক বলেন, আমরা কথা বলেছি। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানিয়েছেন, আমরা তা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব। হাফ পাশ নিশ্চিত করা হবে। আজ বিকালের মধ্যেই অভিযুক্ত চালক ও হেল্পারকে খুঁজে বের করে এখানে এনে ক্ষমা চাওয়ানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক।