ওয়াল নিউজ ডেস্ক
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে টানা চতুর্থ সিরিজ হেরে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করল বাংলাদেশ দল। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দুটি টেস্ট সিরিজ, ভারতের কাছে টি২০ সিরিজের পর এবার আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে তারা। সোমবার রাতে শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়ায় মেহেদি হাসান মিরাজের কাঁধে আসে নেতৃত্বের ভার। শততম ওয়ানডেতে মিরাজের ৬৬ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৯৮ রানের সুবাদে পঞ্চম উইকেটে ১৪৫ রানের রেকর্ড জুটি হয়। ফলে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৮.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৬ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় আফগানরা এবং ২-১ ব্যবধানে সিরিজের ট্রফিও হাতে তোলে তারা। টানা দ্বিতীয়বার ওয়ানডে সিরিজ জিতল তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে। গত বছর বাংলাদেশ সফরেও একই ব্যবধানে সিরিজ জেতে তারা। দেশের ১৭তম ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে এদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেতৃত্বের অভিষেকেই হার দেখলেন মিরাজ। শারজায় সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতার পর ধারাবাহিকতা রাখল আফগানরা।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন নিয়ে। ইনজুরি আক্রান্ত শান্তর পরিবর্তে ১৪ মাস পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নামেন জাকির হাসান। তাসকিন আহমেদকে বিশ্রাম দিয়ে দেশের ১৫০তম ওয়ানডে খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক ক্যাপ পান ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা। ব্যক্তিগত ০ ও ৮ রানে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েও তানজিদ হাসান তামিম ৫৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন সৌম্য সরকারের সঙ্গে। কিন্তু পরপর দুই ওভারে সৌম্য ২৩ বলে ৩ চারে ২৪ ও তানজিদ ২৯ বলে ৩ চারে ১৯ রানে আউট হন। জাকিরও (৪) রানআউট এবং টানা ব্যর্থ তাওহিদ হৃদয় ৭ রানেই সাজঘরে ফেরেন। মাত্র ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত হয় বাংলাদেশ দল। এরপর হাল ধরেন মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহ। তারা পঞ্চম উইকেটে ১৪৫ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজির ভিত গড়ে দেন। ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটি পঞ্চম উইকেটে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের জুটি বাংলাদেশের। এর আগে ২০১৫ বিশ^কাপে ক্যানবেরায় সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ১১৪ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি গড়েছিলেন তাদের বিপক্ষে। ওয়ানডেতে এটি পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ সেরা এবং দেশের বাইরে দ্বিতীয় সেরা জুটি। অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই অর্ধশতক হাঁকানো পঞ্চম ক্রিকেটার হন মিরাজ। তিনি ১১৯ বলে ৪ চারে ৬৬ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে বিদায় নেন। শততম ম্যাচে কোনো বাংলাদেশীর এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।
শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। সেঞ্চুরিরও খুব কাছে চলে যান। তবে সুযোগ থাকলেও পারেননি। ৯৮ বলে ৭ চার, ৩ ছক্কায় ৯৮ রান করে ইনিংসের শেষ বলে রানআউট হন তিনি। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ওমরজাই ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ৭ ওভারে ৩৭ রানে নেন ৪ উইকেট। জবাব দিতে নেমে ৪১ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে সেদিকউল্লাহ অটল (১৪) নাহিদের পেসে বোল্ড হন। রহমত শাহ (৮) ও হাশমতউল্লাহ শহীদিও (৬) দ্রুতই ফিরে যান মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হয়ে। কিন্তু ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট চালিয়েছেন। তিনি আর ওমরজাই চতুর্থ উইকেটে ১০০ রানের জুটি গড়ে আফগানদের জয়ের পথে নিয়ে যান। দেখেশুনে চার-ছক্কা হাঁকানো গুরবাজ ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি হাঁকান। ৩৯তম ওভারে মিরাজ তাকে সাজঘরে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন। গুরবাজ ১২০ বলে ৫ চার, ৭ ছয়ে ১০১ রানে বিদায় নেন। পরে গুলবাদিন নাইবও (১) দ্রুত বিদায় নিলে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ১০ ওভারে ২ মেডেনে মাত্র ২৪ রান দিয়ে রানের গতি কমিয়েছেন। কিন্তু একপ্রান্তে ওমরজাই লড়াই চালিয়ে গেছেন। নাহিদও দুর্দান্ত বোলিংয়ে আফগান ব্যাটারদের চাপে রাখেন। কিন্তু বাকিরা সেই চাপ ধরে রাখতে পারেননি। ফলে ওমরজাই-মোহাম্মদ নবি ১০ বল বাকি থাকতেই দলকে জিতিয়েছেন মাত্র ৪৮ বলে ৫৮ রানের দ্রুতগতির ষষ্ঠ উইকেট জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থেকে। ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শরিফুল ইসলামকে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ওমরজাই। তিনি ৭৭ বলে ৩ চার, ৫ ছক্কায় ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন। নবি ২৭ বলে ৫ চারে অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। নাহিদ ১০ ওভারে ৪০ রানে ও মুস্তাফিজ ৯ ওভারে ৫০ রানে ২টি করে উইকেট নেন।