ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৬ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার ও শুক্রবার তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আমাদের গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় করা মামলায় আজিজুল করিম রাব্বি (২০) নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ। শুক্রবার রাতে উপজেলার পৌর এলাকার স্বরস্বতি গ্রামের নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আজিজুল পৌর এলাকার স্বরস্বতি গ্রামের শামীম আহমদের ছেলে। তিনি গোলাপগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি আজিজুল করিম রাব্বি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হত্যা ও হত্যাচেষ্টায় ৩টি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় ৩টি মামলা রয়েছে।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শনিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আমাদের বড়লেখা প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলা যুবলীগ নেতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোররাতে উপজেলার পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বড়লেখা উপজেলা যুবলীগ নেতা শরীফ হোসেন, আব্দুল মান্নান ও লুৎফা বেগম।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলা যুবলীগ নেতা শরীফ হোসেনকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের হত্যা চেষ্টার মামলায় (নম্বর-১১) সন্দীগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে সিআর-১১৭ (বড়লেখা) নম্বর মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানাভুক্ত আসামি আব্দুল মান্নান ও সিআর-১১১৯ (উত্তরা পশ্চিম) নম্বর মামলায় লুৎফা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বড়লেখা থানার ওসি মো. আবদুল কাইয়ূম বলেন, আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছ।
আমাদের কুলাউড়া প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় করা মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কুলাউড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেল (৩৩)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোররাতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় একটি বাসা থেকে কুলাউড়া থানার এসআই মোহাম্মদ আলীসহ পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রুমেল কুলাউড়া পৌরসভার উছলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. জামাল মিয়ার ছেলে।
এর আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কুলাউড়া থেকে আত্মগোপনে চলে যান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেল।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলার অভিযোগে তার নামে কুলাউড়া থানায় দুটি মামলা রয়েছে। মামলায় এজাহারনামীয় আসামি হওয়ায় কুলাউড়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।
জানা গেছে, বিগত দিনগুলোতে নিষিদ্ধ সংগঠন কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেলসহ তার সহযোগীরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দিতেন। ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে ছাত্রলীগের সভাপতি তায়েফ ও সাধারণ সম্পাদক রুমেলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। এসময় হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া ৩ আগস্ট রুমেল তার বাহিনী নিয়ে হকিস্টিকসহ শোডাউন দিয়ে পুরোশহরসহ স্কুল চৌমুহনী ও রেলস্টেশন চৌমুহনী এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। এসময় তারা পুলিশের সঙ্গে অবস্থান নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনে বাধা দেন এবং ৪ ছাত্রকে পুলিশ দিয়ে আটক করান।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গোলাম আপছার বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোররাতে ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কুলাউড়ার সাধারণ সম্পাদক রুমেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় দুটি মামলা রয়েছে। আসামিকে ঢাকা থেকে কুলাউড়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।
আমাদের জগন্নাথপুর প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামিল আহমদকে (৫২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার তাকে সুনামগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার কেশবপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আওয়ামী লীগের ওই নেতা জগন্নাথপুর পৌরসভার কেশবপুর এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার শিক্ষার্থীদের উপর হামলা মামলায় জড়িত সন্দেহে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় পাঠানো হয়। পরে শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ১ মাস পর ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানসহ ৯৯ জনকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন ঘটনায় আহত জহিরের ভাই। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়। এ পর্যন্ত ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে জগন্নাথপুর আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের ১৫ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।