রোগীরা হাসপাতালে আসেন ক্যান্সারের শেষ ধাপে
ওয়াল নিউজ ডেস্ক
নাক-কান-গলার ক্যান্সার সচেতনতা আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ২০২২ সালে করা অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীদের মধ্যে ২৭ শতাংশই ছিলেন নাক-কান-গলার বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। সচেতনতার অভাবে ৬৩ শতাংশ রোগী হাসপাতালে আসেন এডভান্সড স্টেজে অর্থাৎ ক্যান্সারের শেষ ধাপে।
হাসপাতালের ইএনটি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের উদ্যোগে এ সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের মেডিকেল এডুকেশন ইউনিটে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারের প্রথম পর্বের শুরুতেই হেড-নেক ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের করণীয় পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনের আহবান জানিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগীয় প্রধান ডা. নূরুল হুদা নাঈম। সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ নাফি মাহদীর পরিচালনায় সেমিনারে নাক-কান-গলা বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
রেডিওথেরাপি বিভাগের পক্ষ থেকে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার বনিউল আহমেদ, প্যাথলজি বিভাগের পক্ষ থেকে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. শর্মিষ্ঠা রায়, রেডিওলজি বিভাগের পক্ষ থেকে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. পাপড়ি সাহা।
বিভাগীয় প্রধান ডা. নূরুল হুদা নাঈমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার জন্য এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। সিলেট অঞ্চলে ক্যান্সার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ- মন্তব্য করে তিনি বলেন, মরণঘাতি এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ধূমপানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। সিলেটের নাক-কান-গলার ক্যান্সার সার্জারির চলমান কার্যক্রমকে সমন্বিতভাবে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য আহবান করে তিনি বলেন এজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. উমর রাশেদ মুনির নাক-কান-গলা বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। ক্যান্সার জটিল রোগ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এজন্য মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ নিতে হবে। বোর্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে ভালো ফল পাওয়া যায়, তাই টিউমার বোর্ডের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া তিনি কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। উল্লেখ্য ইতোমধ্যে ৭৫ জন জন্মাবধি শিশুর কানে সফলভাবে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। একই সাথে সুন্দর ভাবে প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি প্রকল্প পরিচালক বিভাগীয় প্রধান ডা. নূরুল হুদা নাঈম সহ বিভাগের সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা.সৌমিত্র চক্রবর্তী এবং চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সালেহ আহমেদ শাহীন। সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন, সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে হেড-নেক ক্যান্সার অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলনে নাক- কান-গলার ক্যান্সারের সাথে জড়িত মানুষের কথা বলা, মানুষের খাবার-দাবার এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসও। তিনি বলেন, নাক-কান-গলার ক্যান্সারের মধ্যে ৭৫ শতাংশই তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের কারণে হয়। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য যেমন- কাঁচা তামাক, জর্দা, মুখের ভিতরে পান পাতা রেখে দেওয়া এবং অতিরিক্ত সুপারি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে এবং মুখের ভিতর পরিষ্কার রাখতে। ধূমপানের সাথে এলকোহল বা মদ্যপানের অভ্যাস নাক-কান-গলার ক্যান্সারের সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। ওসমানী মেডিকেলের নাক-কান-গলা বিভাগে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত নাক-কান-গলার ক্যান্সার সার্জারি হচ্ছে, তবে সমগ্র বিভাগের চাপ সামলানোর জন্য অপারেশনের নির্ধারিত দিন আরো বাড়ানোর প্রয়োজন উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি ঘোষণা দেন যে আগামী ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সপ্তাহব্যাপী হেড-নেক ক্যান্সার সচেতনতা সপ্তাহ পালিত হবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্যানেল ডিসকাশনে অংশগ্রহণ করেন সিলেট উইমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মাশুকুর রহমান চৌধুরী, পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইমাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান ডা. নূরুল হুদা নাঈম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহ কামাল, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো.মুখলেসুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. কাইয়ুম আনসারি, সহকারী অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণ কান্ত ভৌমিক প্রমুখ।
দেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার আক্রান্তের মধ্যে শুধুমাত্র হেড-নেক ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যাই ৩০-৩৫% এবং এর প্রাদুর্ভাব ক্রমবর্ধমান। প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা গেলে হেড-নেক ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য বলে জানিয়েছেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।