• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জ্ঞান ফিরলেও এখনও সংকটাপন্ন রাইয়ান

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪
জ্ঞান ফিরলেও এখনও সংকটাপন্ন রাইয়ান

ওয়াল নিউজ ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ আগস্ট দক্ষিণ সুরমা থানার সামনে গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র রাইয়ানের জ্ঞান ফিরেছে। সে কথা বলতে পারছে। তবে সবাইকে চিনতে পারছে না। সেদিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় দক্ষিণ সুরমার সিলাম পিএল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র রাইয়ান আহমদ (১৬)। ১৭ দিন পর ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাইয়ানের জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা তাকে বিদেশ পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এই তথ্য জানিয়েছেন রাইয়ানের বড় ভাই আইমান আহমদ।
আইমান আহমদ জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল সে। সেখানে ১৪ দিন চিকিৎসা নিয়েও তার জ্ঞান ফিরেনি। সিলেটের চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে রেফার করেন। সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজে এসে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি করান আমার ভাইকে। এখন সে ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গত শুক্রবার তার জ্ঞান ফিরেছে। এখন শুধু চোখ খুলে তাকাতে পারে। আমাদের সবাইকে চিনতে পারছে বুঝা যায়। মাঝে মাঝে আস্তে আস্তে বলে তার মাথায় খুব যন্ত্রণা করে। অপারেশন করতে তাকে ইউকে নেওয়া লাগবে। গুলি না বের করলে সে সুস্থ হবে না। এখানের ডাক্তাররা বলছেন যদি পারেন আপনারা দেশের বাইরে নিয়ে যান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ও ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের দিনে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও অনেক ছাত্রজনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই গুলিতে সিলেটের অনেকই গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে গুরুতর অবস্থা দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ডালিপাড়া গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র রাইয়ান আহমদের। গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতা মিলে বিজয় উল্লাস করছিল সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার সামনে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১২ দিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় সে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ১৭ আগস্ট সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুল হক নিজেই ঢাকায় অবস্থান করে রাইয়ানকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করান।
রাইয়ানের বড় ভাই আইমান আহমদ বলেন, আমার বাবা সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার রাজা ম্যানশনের একটি লাইব্রেরিতে কর্মচারীর কাজ করেন। আমরা ভাই-বোন সবাই লেখাপড়া করছি। তিনিই আমাদের সংসার চালান। এখন তিনিও আমাদের সাথে ঢাকায় আছেন। ঠিক নাই কতদিন ঢাকায় থাকা লাগবে। বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার আগে পর্যন্ত তো এখানে থাকতেই হবে। এখন কোনোভাবে আল্লাহ চালাইতাছেন আমাদের। অনেকেই আমাদের কিছু আর্থিক সাহায্য করেছেন। চিকিৎসা খরচ সব সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরের ব্যবস্থার নিয়ে রাইয়ানের খালাত ভাই মুজিবুর রহমান বলেন, রাইয়ানের মাথার পেছনের দিক দিয়ে গুলি ব্রেইনের ভেতর রক্ত শিরার মধ্যে গিয়ে ফেঁসে গেছে। এখানে নিউরো সায়েন্সের ডাক্তাররা বোর্ড বসিয়ে বলেছেন অপারেশন লাগবে। কিন্তু আমাদের দেশে হাই ফ্রিকোয়েন্সি কোনো মেশিন নেই। আর এই অপারেশন মেশিনের মাধ্যমে না করলে তার ব্লিডিং থামানো যাবে না। এই অপারেশন ইন্ডিয়াতে হবে না। কারণ ইন্ডিয়াতেও হাই ফ্রিকোয়েন্সি মেশিন নেই। ইউকে না হয় সিঙ্গাপুরে এই অপারেশন করতে হবে। ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আসছিলেন রাইয়ানের খোঁজ নিতে। আমরা এখন কাগজপত্র তাদের কাছে জমা দিয়েছি। গতকাল ডাক্তাররা সব দেখে সামারি দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে কাগজ জমা হয়েছে। তাকে ইউকে নেওয়ার প্রসেসিং চলে। মনে হয় সরকারিভাবে করা হবে। আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানি না। ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আশ্বাস দিয়েছেন তারা ইউকে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে। এখানেও তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা হচ্ছে। বিদেশে পাঠানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে। সে আস্তে আস্তে একটু কথা বলতে পারে। মুখ দিয়ে কিচ্ছু খেতে পারে না। নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হয়। মাথায় খুব যন্ত্রণা করেÑ এটা সে বলতে পারে।
উল্লেখ্য, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ডালিপাড়া গ্রামের নানু মিয়া ও রুনু বেগমের দুই মেয়ে দুই ছেলে মিলে ছয় জনের সংসার। রাইয়ানের বড় বোন নাদিয়া বেগম অনার্স ও নাজিয়া বেগম ডিগ্রি অধ্যয়নরত। তার বড় ভাই আইমান আহমদ এইচএসসি ১ম বর্ষে পড়েন ও আহত রাইয়ান আহমদ সিলাম পিএল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। সিলামের ডালিপাড়ার বাড়িতে এখন কেউ নেই। রাইয়ানের চিকিৎসার জন্য স্বপরিবারে ঢাকায় চলে গিয়েছেন তারা। সেখানে হাসপাতালের পাশের এলাকায় ছোট একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন।