ওয়াল নিউজ ডেস্ক
আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে। শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ছয়টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৫ কারাখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার দুইটি কারখানার শ্রমিকরা দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এরপর পৃথকভাবে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়িতে তুসুকা গ্রুপের শ্রমিকরা বহিরাগত শ্রমিকদের সাথে মিলে বিভিন্ন দাবিতে শনিবার ধর্মঘট শুরু করেন। তারা কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে, ভাঙচুর এবং ৪-৫ জন কর্মকর্তাকে মারধর করেন। রোববার সকালে কর্তৃপক্ষ তুসুকা গ্রুপের তুসুকা জিন্স, তুসুকা ট্রাউজার্স, তুসুকা প্রসেসিং, তুসুকা প্যাকেজিং, তুসুকা ডেনিম এবং তুসুকা ওয়াশিং এই ৬টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়।
তুসুকা গ্রুপের পরিচালক তারেক হাসান জানান, সরকারি ঘোষণা ও বিজিএমইয়ের নির্দেশনা মেনে গত জুলাই মাসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়। তারপরও অতিরিক্ত সুবিধা চেয়ে শ্রমিকরা শনিবার আন্দোলনে নামে। কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানালেও তারা তা অমান্য করে এবং কারখানা ভাঙচুর করে। তারা কয়েকজন কর্মকর্তাদের মারধর করে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রবিবার থেকে শ্রম আইন অনুযায়ী ওই কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, হাজিরা বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে তারা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দাবি নাকচ করে দেওয়ায় তারা ধর্মঘটে যান। রবিবার কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা দ্রুত কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি করেন।
এদিকে ছুটি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামায় রোববার সকালে কোনাবাড়ি বিসিকের রেজাউল এ্যাপারেলস, লাইফ টেক্সটাইল, লাইফ স্টাইল, ফ্যাশন পয়েন্ট, ফ্যাশন সামিট, আইআর গার্মেন্টে একদির ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। জরুন এলাকার রিপন নিটওয়্যার শ্রমিকরা পাশের এমএম গার্মেন্টে ঢিল ছুড়লে কর্তৃপক্ষ দুইটি কারখানাই দুপুরের পর ছুটি ঘোষণা করে। পরে পাশের এসো সোয়েটার কারখানাও ছুটি ঘোষণা করা হয়।
অপরদিকে দুপুরের পর কাশিমপুরের জিরানী এলাকার ডরিন টেক্সটাইল ও ডরিন এ্যাপারেলসের শ্রমিকরা জিএম ও পিএমের অপসারণ ও ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। তারা আশেপাশের কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের তাদের সাথে আন্দোলনে শামিল হতে আহ্বান জানায়। অবরোধের কারণে দুপুর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। পরে ভাঙচুরের আশঙ্কায় ডরিন টেক্সটাইল, ডরিন এ্যাপারেলস, নবী টেক্সটাইলসহ আশপাশের কমপক্ষে ১৪ কারখানায় রবিবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশের কোনাবাড়ি কাশিমপুর জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু তালেব জানান, ডরিন টেক্সটাইল ও ডরিন এ্যাপারেলসের শ্রমিকদের অবরোধের কারণে দুপুর থেকে নবীনগর-চন্দ্রা সড়কে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চরম দুভোর্গে পড়েন যাত্রীরা। সন্ধ্যার পরও তারা সড়কে অবস্থান করছিল। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। তাছাড়া শুধু কাশিমপুরেই ১০টির অধিক কারখানায় একদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।