ওয়াল নিউজ ডেস্ক
বকেয়া মজুরির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চা-শ্রমিকরা। দেশের ১৬টি চা-বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে মজুরী আদায়ে সাপ্তাহের অধিক সময় ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন।
শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার চা-শ্রমিক কাজ করেন। তাদের ওপর আরও ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এনটিসির বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিক নেতারা ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরদিন ২১ অক্টোবর সকাল থেকে এই কর্মবিরতির পালন করছেন। চা-শ্রমিকরা জানান, শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। মজুরি না না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে তারা কাজে যোগ দিবেন না।
ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি) এর মালিকানাধিন দেশের ১৬ টি চা-বাগানের মধ্যে ৭টি চা-বাগান রয়েছে মৌলভীবাজারে। এর মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলায় পাত্রখোলা, কুরমা, চাম্পারায়, মদনমোহনপুর ও মাধবপুর চা-বাগান। কুলাউড়ার বিজয়া চা-বাগান ও মৌলভীবাজার জেলা সদরে প্রেমনগর চা-বাগান।
পাত্রখোলা চা-বাগানের যুব নেতা প্রদীপ পাল বলেন, শ্রমিকদের ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। মজুরি না পেয়ে তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বিগত শারদীয় দুর্গাপূজার আগে বলল মজুরি দিয়ে দিবে। কিন্তু আমাদের কোন মজুরি দেয়া হল না। চা-শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই। তারা অনেক কষ্ট করে চলছেন। টাকা না পেলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে, না খেয়ে মরতে হবে।
কুরমা চা-বাগানের চা-শ্রমিক নারী নেত্রী গীতা রানী কানু জানান, কুরমা চা-বাগানে এখন অনেকেরেই কচু পাতা ভাতের নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। বাজারে যে হারে জিনিসপত্রের দাম তাতে বাগানবাসীর অনেক কষ্ট হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। এমনিতে মাত্র ১৭০ টাকা হাজিরা যা এখন বাজারের সাথে সামঞ্জস্য নয়। তারপরে আবার বাগান ঠিকমতো হাজিরা দিতে পারতেছে না। আর কতদিন পরে বাগানের কচু পাতাও মিলবে না।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিক এক সপ্তাহের মজুরি না পেলে অবর্ণনীয় সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও মোট ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মজুরি পায়নি। কবে দেয়া হবে তার কোন নিশ্চয়তা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিতে পারছেন না। বিভাগীয় শ্রম দপ্তর এর উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক এর বিভিন্ন উদ্যোগ ও আশ্বাস মালিকপক্ষের ব্যর্থতায় ইতিপূর্বে সফল হয়নি। এমতাবস্থায় হতাশ শ্রমিকরা কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি বা নতুন কোন দাবি নিয়ে কোন ধর্মঘট করছেন না। পাওনা পরিশোধ করলে পেট ভরে ভাত খেয়ে কাজে যেতে শ্রমিকরা প্রস্তুত। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় মালিকদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
ন্যাশনাল টি কোম্পানীর মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন, শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি। পরিচলনা পর্ষদে দায়িত্বশীল কেউ না থাকায় এমন হয়েছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি স্টাফ বেতন, বিদ্যুত বিল, গ্যাস বিল দেয়া যাচ্ছেনা। কৃষি ব্যাংকের সাথে এনটিসির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকগন সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছেন দ্রুত ঋণ পাওয়ার জন্য। ঋণ পেলেই প্রথমেই শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এখন চা-বাগানগুলোতে উৎপাদনের সময়। এখন যদি শ্রমিকেরা কর্মবিরতি চালিয়ে যান, তাহলে চা-বাগানের অনেক ক্ষতি হবে। দ্রুত মজুরি পরিশোধের সমাধানের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি) চা-বাগান শ্রমিকদের জন্য ৩০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এনটিসিতে বেশ কিছুদিন থেকে চেয়ারম্যান ছিলেননা। ইতোমধ্যে নতুন চেয়ারম্যান যোগদান করেছেন এবং কৃষি ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন হয়েছে। আশা রাখছি চলতি সপ্তাহের মধ্যে সব মিলিয়ে সমাধান হয়ে যাবে।