ওয়াল নিউজ ডেস্ক
চট্টগ্রামে বাধা উপেক্ষা করে সনাতন জাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদ সমাবেশে হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নিয়েছেন। নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ থেকে মঞ্চের মুখপাত্রসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে সোমবার সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নাহলে সোমবার সারা দেশে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা জানান।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বক্তব্যে বলেন, ‘মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আমরা রবিবার স্মারকলিপি দেব প্রধান উপদেষ্টা বরাবর। এরপরও কাজ না হলে সোমবার সারা দেশে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে আসতে লোকজনকে বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস।
শুক্রবার বেলা তিনটার এই সমাবেশের আগে থেকে সমাবেশস্থল চেরাগী পাহাড় মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। এ ছাড়া নগরের জামালখান, আন্দরকিল্লা মোড়, বৌদ্ধমন্দির, আসকার দীঘির পাড়সহ বিভিন্ন স্থানেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ছিল। চেরাগী পাহাড়মুখী মিছিল ও লোকজনকে আটকে দিচ্ছিলেন বলে সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়।
সমাবেশস্থল চেরাগী পাহাড় মোড়েও বেলা তিনটা পর্যন্ত সমবেত লোকজনকে রাস্তার এক পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকে রাখে। পরে লোকসমাগম বাড়লে বাধা উপেক্ষা করে চেরাগী পাহাড় মোড়ের চত্বরে অবস্থান নেন। এরপর সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
বাধার বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খান বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশনা ছিল চেরাগীতে সভা সমাবেশ হবে না। তবে পরে বাধা ঠেলে লোকজন চলে আসেন।
সমাবেশের শুরুতে স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে সমবেত হয়েছি। কিন্তু নগরের জামালখান, আসকার দীঘির পাড়, নন্দনকানন ও আন্দরকিল্লা এলাকায় লোকজনকে সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘আমাদের কারাগারে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, মামলা করেছেন সাধু ও সনাতনীদের বিরুদ্ধে। সাধুরা কিন্তু ভয় পান না। ৮ দফা আদায় করে ছাড়ব। সনাতনীদের দমিয়ে রাখতে পারবেন না। প্রশাসনকে সম্মান করি। তাই আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।’
গৌরাঙ্গ দাস আরও বলেন, জাতীয়বাদী দল বিএনপি ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই তারা মামলার বাদী ফিরোজ খানকে বহিষ্কার করেছে। ফিরোজ খানকে যে ইন্ধন দিয়েছে, তাকে খুঁজে বের করতে হবে। না হলে বারবার এ দেশের নাম ক্ষুণ্ন হবে।
অন্যতম সমন্বয়ক জুয়েল আইচ বলেন, ‘আমরা সরকারের সহযোগী হতে চাই। ৮ আট দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে আর রাস্তায় নামব না। আর যদি মনে করেন, আমাদের কারাগারে নেবেন, তাহলে যাব। রাস্তায় যেহেতু নেমেছি, দাবি আদায় করে যাব। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কেউ বাধ্য করবেন না ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করতে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সমাবেশ হয়েছে। আমরা দেশদ্রোহী কী কাজ করলাম? সনাতনীরা সাম্প্রদায়িক নন। আমাদের মধ্যে কোনো দেশবিরোধী ও সাম্প্রদায়িকতা নেই। পৃথিবীর যেই প্রান্তে থাকি, সনাতনীরা নিজ দেশকে ভালোবাসে, মায়ের সম্মান করে।’
সনাতনী মঞ্চের সংগঠক জগন্নাথ ব্রহ্মচারী বলেন, ‘সনাতনীরা বিশ্বে সুশৃঙ্খল ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত। আমরা সবাই একসঙ্গে কারাগারে যাব।’
সংগঠক সুমন দের সঞ্চালনা আরও বক্তব্য দেন বিপ্লব চৈতন্য মহারাজ, অজপানন্দ ব্রহ্মচারী, রণনাথ ব্রহ্মচারী, রিগান চৈতন্য দাস, তাপসানন্দ ব্রহ্মচারী, অকিঞ্জন গোর দাস ব্রহ্মচারী, দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, সুচারু কৃষ্ণ দাস, পরিতোষানন্দ মহারাজ, শ্রীল সুধারাম মহারাজ, মিলন শর্মা, কুশল বরণ চক্রবর্তী, কাঞ্চন আচার্য, যীশুময় দেব প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বুধবার নগরের কোতোয়ালি থানায় সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। দুই মাস ধরে সনাতন জাগরণ মঞ্চ আট দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এর অংশ হিসেবে ২৫ অক্টোবর লালদীঘি মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশ থেকে যাওয়ার সময় নিউমার্কেট এলাকায় জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে মামলাটি করেন নগরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ খান। মামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে সনাতন জাগরণ মঞ্চ। এতে শুক্রবার ৬৪ জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের সমাবেশ হয় চেরাগী মোড়ে।