ওয়াল নিউজ ডেস্ক
দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার কম্পিউটার ইনচার্জ অমিত দাস শিবু (৩৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সল আহমদকে কারামুক্ত করতে নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে ফয়সল ‘মিথ্যা মামলায় রাজবন্দি’ হয়ে আছেন দাবি করে তার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে নগরে পোস্টারিং ও মানববন্ধন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে মিডিয়া অঙ্গনসহ সর্বত্র চলছে ব্যাপক সমালোচনা। আর নিহত অমিতের পরিবার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়। অমিত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সলসহ আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। এছাড়া ফয়সলের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও একাধিক মামলা।
মিডিয়াকর্মী অমিত দাস শিবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সিলেটে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। ঘটনার পরই পুলিশ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকার হাজারিবাগ থেকে আব্দুল মুকিতের ছেলে ফয়সল আহমদকে গ্রেপ্তার করে। ফয়সলের বিরুদ্ধে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সুমাইয়া আক্তার সুমি ও তাহমিদ আহমদকে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল তাদের। এছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আরও দুই আসামি- হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার বাসিন্দা আশিকুর রহমান টিপু (৩৮) ও সিলেট শহরতলির জাহাঙ্গীরনগর এলাকার বাসিন্দা মো. নিজাম (৩৮)। তখন আসামি টিপু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৭ এপ্রিল নিহত অমিত দাসের বড় ভাই অনুকূল দাস (৪২) বাদী হয়ে নগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নগরের এয়ারপোর্ট থানাধীন শাহী ঈদগাহ এলাকার হাজারিবাগ দলদলি চা-বাগানসংলগ্ন মাঠ থেকে অমিত দাস শিবুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত অমিত দাস শিবু সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার এলেংজুড়ি গ্রামের মৃত গৌর চাঁদ দাসের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক ছিলেন।
পত্রিকার কর্মী অমিত দাস হত্যা মামলার প্রধান আসামির মুক্তির দাবিতে হওয়া মানববন্ধনের বিষয়ে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব বলেন, ‘আমরা মানববন্ধনে বলেছি ফয়সল যদি দোষ করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হোক, আর সে দোষী না হলে তার জামিন দেওয়া হোক। প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্ত করে বিষয়টা পরিস্কার করার কথা বলেছি। অন্য বক্তারাও এটি বলেছেন।’
মামলার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মর্কতা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘অমিত হত্যা মামলার পাঁচ আসামি জেলে ও ১ জনের জামিন হয়েছে। আসামি তাহমিদ আহমদ জামিন পেয়েছেন। আর মামলার বাকি চার আসামি জেলে আছেন। আমরা নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট চলে এলে চার্জশিট দাখিল হবে।’
ফয়সলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন: অমিত দাস হত্যা মামলার প্রধান আসামি, সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহ-সমাজসেবা সম্পাদক ফয়সল আহমদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গত শুক্রবার শাহী ঈদগাহ গেইটের সামনে শাহী ঈদগাহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার মুরুব্বি আব্দুর নূরের সভাপতিত্বে এবং শাকের আহমদ ও এমএস সুমনের যৌথ পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- সাবেক ছাত্রনেতা, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা কামরুল হাসান শাহীন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব, ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাদিকুর রহমান সাদিক, সহসভাপতি জিয়া উদ্দিন চৌধুরী লিটন, জেলা বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মালেক, ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুহেলুর রহমান শিপন, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মহানগর ছাত্রদলের সহ-সমাজসেবা সম্পাদক ফয়সল আহমদকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলে মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন এবং তার মুক্তি দাবি করেন।