ওয়াল নিউজ ডেস্ক
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া এবং অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন ‘সিলটী আওয়াজ’ এবং ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুল্লি ফাঙ্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নেতৃবৃন্দ।
শনিবার দুপুরে নগরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। এ দাবিতে ১ নভেম্বর বাদ জুম্মা সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে বলে তারা জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলটী আওয়াজ এর আহবায়ক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুল্লি ফাঙ্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের আহ্বায়ক কে এম আবু তাহের চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রবাসীসহ বর্তমানে সিলেটবাসীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়িত না হলে এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে ৯টি দাবি উপস্থাপন করেন তারা। দাবিগুলো হলো- ওসমানী বিমানবন্দরকে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করা, বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের পাশাপাশি বৃটিশ, তুরস্ক, কাতার, আমিরাত, দুবাই, ওমান, প্যান আম, সৌদিআরব সহ অন্যান্য দেশের ফ্লাইট চালু, ওসমানী বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা, বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া হ্রাস করা, ঢাকা ও সিলেটের মধ্যে বিমানের ভাড়ার অস্বাভাবিক পার্থক্য দূরীকরণ, ওসমানী ও শাহজালাল বিমানবন্দরে কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন সেকশনে প্রবাসী যাত্রীদের অহেতুক হয়রানী বন্ধ করা, সিলেটের গ্যাস বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে সংযোগ প্রদান, ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো সিলেট টু আখাউড়া নতুন ডাবল রেললাইন নির্মাণ করা এবং সিলেট টু ঢাকা মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা।
তারা বলেন, সিলেটের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোরম দৃশ্য দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। সিলেটী প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের উন্নয়নে শতকরা ৪০ ভাগ অবদান রাখছে। কিন্তু ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে মাত্র আন্তর্জাতিক হলেও কাজে এখনো আন্তর্জাতিক হয়নি। একমাত্র বাংলাদেশ বিমান ছাড়া অন্য কোনো এয়ারলাইন্সকে ওসমানী বিমানবন্দরে নামতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও ৭টি বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট উঠানামা করছে। বাংলাদেশ সরকার ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি সিলেটবাসীর সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, যা দুঃখজনক।
সিলেটিরা বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি উল্লেখ করে তারা বলেন, বাংলাদেশ বিমানের শতকরা ৯৫ ভাগ যাত্রী সিলেট অঞ্চলের। বিমানের বেশিরভাগ যাত্রী সিলেটী হওয়ায় সিলেটীদের জিম্মি করে বিমানের রিটার্ন ভাড়া লন্ডন থেকে সিলেট পর্যন্ত কখনো ১৫০০, কখনো ১২০০, কখনো ১৮০০ পাউন্ড পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অথচ সমান ফ্লাইটে ঢাকার যাত্রীদের জন্য ৮০০ পাউন্ড ভাড়া নেয়া হয়। এটা প্রবাসী সিলেটবাসীর প্রতি আক্রোশমূলক এবং অভিনব বৈষম্য। যার ফলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটীরা তাদের ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে স্বদেশে যেতে পারেন না। অতীতের সরকার সিলেটবাসীর উপরোক্ত সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের নতুন প্রজন্ম সন্তানেরা বিদেশী এয়ারলাইন্সের ভাড়া কম থাকার কারণে বাংলাদেশে না গিয়ে তুরস্ক, মরক্কো, মিশর ও ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে হলিডেতে যাচ্ছে। ফলে আমাদের সন্তানেয়া স্বদেশমুখী হচ্ছে না বাপদাদার ভিটে-মাটিতে আসতে পারছে না। এতে বাংলাদেশ সরকারও বিরাট অংকের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মানের কোন সেবা নেই এখানে। বিমানের চেক ইন কাউন্টারে প্রতিনিয়ত যাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুল্লি ফাঙ্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নামে একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ গঠন করেন। বৃটেনের উক্ত সংগঠনের দাবি নিয়ে সিলেটেও আমরা সিলেটবাসীর ন্যায্য দাবীকে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে গত ১১ অক্টোবর ‘সিলটী আওয়াজ’ নামকরণে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করি। মুক্তিযোদ্ধা এ মালেক খানকে আহবায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূনাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলায় আহবায়ক কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ‘সিলটী আওয়াজ’ সিলেটবাসীর প্রাণের দাবীসমূহ ছাড়াও আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করতে বদ্ধপরিকর। সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সিলেট তথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থে সিলেটের সর্বস্তরের জনসাধারণকে আগামী ১ নভেম্বর সিলেট কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধনে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানান তারা।