তাওহীদুর রহমান শাহ্
সিলেট নগরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির আরেক নাম হকার সমস্যা। ভাসমান ব্যবসায়ীদের (হকার) বিগত সময়ে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হলেও সেই হকার মার্কেট এখন খাঁ খাঁ করছে। বিপরীতে সিলেট নগরের প্রশস্ত রাস্তার ফুটপাত দখল করে নিয়েছে হকাররা। ফলে নগরে যানজট বাড়ছে, বহুলাংশে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। হকার সমস্যার কারণে নগরে সংকট আগের মতো তীব্র দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন নাগরিক, জনপ্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ীরা।
ফুটপাত ও রাস্তায় হকার বসায় শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, পেশাজীবীসহ নগরবাসীর মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এ বিষয়ে নগরবাসীদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
তন্মধ্যে কলেজ শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেট নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে রাস্তার পাশে ভাসমান ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দেওয়া। লালদীঘি হকার্স মার্কেটে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা সত্ত্বেও সিলেট নগরের প্রত্যেকটি রাস্তার পাশে তারা বসেন। পুলিশ প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।’
আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘ফুটপাতে হকার বসার কারণে এই দেখুন আমাদের দোকানের সামনে কী অবস্থা! আমাদের ব্যবসাপাতি একদম লাটে উঠেছে। পুলিশ প্রশাসনকে কঠোরভাবে হকারদের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমি জোর দাবি জানাই।’
কলেজ শিক্ষার্থী জান্নাতুল ঊর্মি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আমি কলেজে যাবার জন্য উপশহর থেকে কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত গাড়িতে আসি। এরপর হেঁটে আসতে হয় চৌহাট্টা। ১০ মিনিটের রাস্তা আসতে লাগে এক ঘন্টা। নগরবাসীদের হাঁটা-চলার জন্য ফুটপাত থাকলেও সেটা দখল করে রেখেছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা৷ ফুটপাতে কেন হকাররা বসবে? হাঁটার সময় আমাদের এমনও পরিস্থিতি আসে য়খন চলন্ত বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ফুটপাত থেকে হকারদের সরানোর দাবি জানাচ্ছি।’
সিলেটে হকারদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয় বিগত ১০ মার্চ। নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের জন্য সম্প্রতি নির্মিত অস্থায়ী মার্কেটে হকারদের ব্যবসার জায়গা করে দেওয়া হয়। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টায় এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
মূলত সিসিকের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হকারদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নগর ভবনের পাশের লালদীঘিরপাড় এলাকায় অস্থায়ী বিপণিবিতান (মার্কেট) নির্মাণ করা হয়। সেখানে মাটি ভরাট, ইটের সলিং, বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থাসহ সব কাজ শেষে ১০ মার্চ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানটি হকারদের ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার হকার একসঙ্গে বসে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন বলেও জানিয়েছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
সিসিকের সাবেক দুই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রচেষ্টায় নগরীর লালদিঘিরপার হকার্স মার্কেটে তাদের পুণর্বাসন করা হলেও এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে এখনো উদ্বিগ্ন নগরবাসী। লালদিঘিরপারে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পর সেখানে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ভাসমান ব্যবসায়ীরা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আবারও সিলেটের রাস্তা ও ফুটপাত দখলে নিয়েছেন।
নগরের রাস্তা-ফুটপাতের পাশাপাশি ক্বিনব্রিজেও চলছে রমরমা ব্যবসা। নগরের ব্যস্ততম বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, লামাবাজার, তালতলাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব রাস্তায় বাহারি সামগ্রী যেমন- পেঁয়াজ রসুন থেকে তরকারি, ফলমুল এবং কাপড়চোপড় ব্যবসায়ীসহ আরও নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন ভাসমান ব্যবসায়ীরা।
হকারদের দৌরাত্মে নগরবাসী যখন হাঁসফাঁস করছেন তখনই নতুন করে ঘোষণা এসেছে আগামী রোববার (২৭ অক্টোবর) থেকে সিলেট মহানগর এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো যাবে না। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে সেনাবাহিনী, সিলেট সিটি করপোরেশন, সিলেট হকার ঐক্য পরিষদ, পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
আইন মেনে নির্ধারিত তারিখে হকারদের নিকট থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত করলে জনমনে ফিরবে স্বস্তি, প্রত্যাশা নগরবাসীর।