• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সংলাপ শেষে সরকারি ব্রিফিং : রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগকে বাধা দেওয়া হবে

The Wall News.Com
প্রকাশিত অক্টোবর ২১, ২০২৪
সংলাপ শেষে সরকারি ব্রিফিং : রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগকে বাধা দেওয়া হবে

ওয়াল নিউজ ডেস্ক


রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হবে। নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব দ্রুতই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের পর আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম এ কথা বলেন। সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সামনে রেখে শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। কয়েকটি দল জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানিয়েছে। প্রায় সব দল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত সংস্কার চেয়েছে। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব দ্রুতই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার বেলা তিনটায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামকে দিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপর একে একে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এনডিএম, লেবার পার্টি, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে সংলাপ হয়। সব মিলিয়ে ছয়টি দল ও তিনটি জোট গতকাল পৃথকভাবে সংলাপে অংশ নেয়। প্রতিটি দল ও জোটের জন্য সময় ৩০ মিনিট করে নির্ধারিত ছিল।
এর আগে ৫ অক্টোবর বিএনপিসহ পাঁচটি দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার তৃতীয় দফায় সংলাপ হয়। মাঝে পূজার ছুটির কারণে সব দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি। গতকাল বাকি দল ও জোটগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়। এই সংলাপে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীদের এই সংলাপের বাইরে রাখা হয়েছে। জাতীয় পার্টিকেও এবার সংলাপে ডাকা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে শনিবার রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
‘তাঁরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন’ : বাসসের খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার বিষয় সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, যাঁরা গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, অবৈধভাবে নির্বাচিত হয়ে তাঁরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্টÑতাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করবে। কীভাবে বাধা বাস্তবায়িত হবে, সেটা দেখতে পাবেন। এটার আইনি ও প্রশাসনিক দিক আছে। যখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে, তখন বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মাহফুজ বলেন, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকার পর্যালোচনা করছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সব ধরনের অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার একা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য খুব দ্রুত সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, বিধি অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে ছয় সদস্য থাকার কথা। এ ছাড়া বিধি অনুযায়ী যা যা করা দরকার, তা-ই করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে কবে কীভাবে নির্বাচন হবে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে অন্য কাজ হবে, সমান্তরালভাবে সংস্কার কমিশনও কাজ করে যাবে।
মাহফুজ আলম বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে সংলাপে বেশি কথা হয়েছে। গণহত্যার বিচার কার্যক্রম নিয়েও কথা হয়েছে। সংলাপে দ্রব্যমূল্যের প্রসঙ্গটিও এসেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আবারও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা এসেছে। আওয়ামী লীগসহ তাদের যে শরিক দল, তাদের রাজনীতি কীভাবে সীমাবদ্ধ করা যায়, তা নিয়ে কথা এসেছে। তিনটি সংসদ হয়েছে অবৈধভাবেÑ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এ, এই তিন সংসদ কীভাবে অবৈধ ঘোষণা করা যায়, সে সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বাসসের খবরে বলা হয়, গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে দেশের বাইরে কীভাবে পালিয়ে গেলÑ এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কীভাবে পালাল, সেটা সরকার তদন্ত করছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি : প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। শনিবার বিকেলে আলোচনা শেষে বেরিয়ে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে এই দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই। এর আগে সংলাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের ১০৩টি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। গতকালের সংলাপে আরও ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছেন।
এই সংলাপে অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
১৪ দফা প্রস্তাব ১২-দলীয় জোটের : সংলাপে অংশ নেওয়ার পর ১২-দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের যেসব প্রেতাত্মা এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে, তাদের আমরা অপসারণ করতে বলেছি। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অবিলম্বে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেছি।’ এই জোট সংস্কারের ১৪ দফা প্রস্তাব দিয়েছে এবং যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চেয়েছে। আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন ও সৈয়দ এহসানুল হুদা।
রোডম্যাপ চায় জাতীয়তাবাদী জোট : নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রকাশ করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। একই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করারও অনুরোধ জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
সংলাপে অংশ নেন জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদিকী, এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের প্রমুখ।
১৪ দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি বিজেপির : বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপ শেষে আন্দালিব রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিষিদ্ধ করা হবে কি না, সেটা মুখ্য নয়। একটা ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।