ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সিলেটের বিশ^নাথে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় এ সংঘর্ষ হয়।
বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নু’মান আহমদকে অপসারণের দাবিতে ছাত্র-জনতার একটি পক্ষ ৫ আগস্টের পর থেকে আন্দোলনে নামে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে দু’পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে ‘ছাত্র-জনতা’ ও প্রিন্সিপাল পক্ষ’র অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দু’দফা ছুটি কাটিয়ে বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নু’মান আহমদ নিজ পদের দায়িত্ব গ্রহন করতে গেলে পূর্বের দ্বন্দ্বের জের ধরে উভয়পক্ষ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে পৌরশহরের পুরাণবাজার এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। এসময় সাধারণ লোকজন দিকবিদিক ছুটোছুটি করেন।
প্রিন্সিপাল মাওলানা নু’মান আহমদের পক্ষের মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইসলাম উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার প্রিন্সিপাল ছুটি কাটিয়ে নিজ পদের দায়িত্ব গ্রহন করতে গেলে বহিরাগতরা মাদ্রাসায় প্রবেশ করে হামলা করে। তাদের হামলায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আব্দুল সামাদ, গিয়াস উদ্দিন, আউয়াল হোসেন পারভেজ, মিনহাজ উদ্দিন, আবিদ উদ্দিন ও মো. শাহজাহানসহ আরও ১০/১৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে প্রিন্সিপাল মাদ্রাসায় যাওয়ার পূর্বেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষকদের হাজিরা খাতা নিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যান।
হামলা করার অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্র-জনতার পক্ষের পৌর শহরের শরিষপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার পূর্বে যাতে অধ্যক্ষ দায়িত্ব গ্রহন না করতে পারেন, সেই প্রতিবাদ জানালে তারা অতর্কিতভাবে হামলা করে। এতে সুরত মিয়া, ছালিক মিয়া, জলাল মিয়া, সাইদুল ইসলাম, রাসেল আহমদ, জামিল মিয়া. জাবের মিয়া, রিপন মিয়া, এহিয়া আহমদ ও সুমন মিয়াসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা নাজিম উদ্দিন বলেন, ছুটিতে থাকা প্রিন্সিপাল মাওলানা নু’মান আহমদ জোরপূর্বক মাদ্রাসায় ঢুকে দায়িত্ব নিতে চাইলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাৎক্ষনিকভাবে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যক্ষ মাওলানা নু’মান আহমদের ছুটির বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি (মাওলানা নাজিম উদ্দিন) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে যাব।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসায় গিয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নু’মান আহমদকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) রুবেল মিয়া বলেন, দু’দফা ছুটি শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নু’মান আহমদ বৃহস্পতিবার মাদ্রাসায় যোগদান করতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক সুনন্দা রায় বলেন, ঘটনার পরপরই উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে সিদ্ধান্ত হয়েছে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসায় ক্লাস চলবে। তবে এসময় মাদ্রাসায় কোন বহিরাগত প্রবেশ করে মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট করতে পারবে না। আর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নু’মান আহমদ ছুটিতে থাকবেন এবং মাওলানা নাজিম উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।