ওয়াল নিউজ ডেস্ক
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদের সাবেক উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাবেক মন্ত্রী ও মতিয়া চৌধুরীর মামা মোস্তফা জামাল হায়দারও তার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার দুপুর ১টার দিকে মারা যান মতিয়া চৌধুরী। ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত মতিয়া চৌধুরীকে সকালে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এরপরই আমরা ইসিজি করে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করি। শেষ পর্যন্ত আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সফল হতে পারিনি। দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মতিয়া চৌধুরীর জানাজা আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। প্রয়াত মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নতুন জায়গা চাওয়া হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের কাছে। জায়গা পেলে সেখানে দাফন করা হবে, না পেলে তার স্বামী বজলুর রহমানের কবরে দাফন হবে। এলাকার মানুষের দাবি থাকলেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মতিয়া চৌধুরীকে নিজের নির্বাচনী এলাকায় নেওয়া হবে না।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে মতিয়া চৌধুরী ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে গেছেন। নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরী ১৯৯১ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী মরহুম জাহেদ আলী চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে জাহেদ আলী চৌধুরীকে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং সবশেষ ২০২৪-এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মতিয়া চৌধুরী; যদিও এসব নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
মতিয়া চৌধুরীর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মতিয়া চৌধুরী। তিনি ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের ১ নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।