ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের ছাতকে কয়েকশ বছর ধরে যে মাঠে খেলাধুলা করে আসছিলেন এলাকাবাসী, সেই খেলার মাঠ নিয়ে গত ১৫ বছর ধরে চলছে আইনি লড়াই। গ্রামবাসী খেলার মাঠটি বর্তস্বত্ব ঘোষণার দাবি করে তা রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অপরদিকে মালিকানা প্রতিষ্ঠার দাবি করছে অপর পক্ষ।
ফুটবল খেলার এই মাঠের অবস্থান সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের জটি গ্রামে। দুই একরের উপর প্রতিষ্ঠিত ‘জটি ফুটবল’ খেলার মাঠ’ হিসেবে একে চেনেন এলাকার লোকজন। শুধু এই মাঠ রক্ষাই নয়, মাঠসহ গ্রামের পতিত জায়গা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গা ও কবরস্থান রক্ষায় সম্প্রতি অঙ্গিকারনামা সম্পাদন করেছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, জটি ফুটবল খেলার মাঠে কয়েকশ বছর ধরে এলাকার মানুষ খেলাধুলা করে আসছিলেন। ২০০৯ সালে গ্রামের কয়েকটি পরিবার মাঠটি তাদের রেকর্ডিয় ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া দাবি করলে শুরু হয় আইনি লড়াই।
জটি মৌজার জেএল নং-৩৯০ এর ১১নং দাগের ৫টি খতিয়ানে লায়েক পতিত শ্রেণির ২ একর ৬ শতক জায়গা নিয়ে মাঠের অবস্থান। ৫টি খতিয়ানের মধ্য ৭৭ খতিয়ানে ৪১ শতক জায়গার মালিক ছাতকের সিংচাপইড় গ্রামের নবাবুর রাজা চৌধুরী ওয়াকফ এস্টেট। এর মূল মোতাওয়াল্লি ছিলেন খান বাহাদুর গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। ১৯৮০ সাল থেকে মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছেন নবাবুর রাজার নাতি, সুনামগঞ্জের অ্যাডভোকেট হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী। নবাবুর রাজার পুত্র না থাকলেও তাদের আত্মীয় জুলোয়ার রাজাকে পুত্র দেখিয়ে তার উত্তরাধিকারের কাছ থেকে ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে বিভিন্ন দলিল সম্পাদন দেখানো হয়।
এ বিষয়ে মোতাওয়াল্লি হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী জানান, তিনি মোতাওয়াল্লি থাকার পরও জানতে পারেননি কারা কিভাবে দলিল করে নিয়েছে। ওয়াকফের জায়গা বিক্রি হয় না।
কাগজপত্র বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, ৭৬ খতিয়ানে ৪২ শতক জায়গার এসএ মালিক ছিলেন জুলোয়ার রাজা চৌধুরী গং। এছাড়া ৮১ খতিয়ানের ৪১ শতকের এসএ মালিক ছিলেন শরিয়ত উল্লাহ গং, ৮৩ খতিয়ানে ৪১ শতকের এসএ মালিক আব্দুর রহমান গং ও ৮০ খতিয়ানে ৪১ শতকের এসএ মালিক প্রহাদ আলী, কাছিম আলি, সাজিদ আলী, ইরশাদ আলী ও সিদ্দেক আলী। তাদের অংশের মধ্যে কাছিম আলী মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরা মালিকানা দাবি করেন।
খেলার মাঠ হিসেবে জনশ্রুতি থাকায় গ্রামের কেউ কোনোদিন দলিল তল্লাশি করেননি। ২০০৯ সালে মালিকানা দাবি করে মাঠ দখলের চেষ্টা করেন ৮৩ খতিয়ানের অংশিদার সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বশির আলীর উত্তরাধিকাররা। তাদের পক্ষে স্বত্ব দাবি করে গ্রামের লোকদের উপর ইনজাংশন জারি চেয়ে মামলা (নং-১৪/০৯) করা হয়।
অপরদিকে গ্রামের পক্ষে বর্তস্বত্ব তথা খেলার মাঠ ঘোষণার দাবিতে মামলা (নং-২০/০৯) করা হয়।। এতে উল্লেখ করা হয়, শত শত বছর ধরে এলাকার লোকজন খেলাধুলা করে আসছেন। বর্তমানে সুনামগঞ্জ জজ আদালতে মামালটি আপিল শুনানি চলছে। ৮০ খতিয়ানে ৪১ শতকের এসএ মালিক প্রহাদ আলী, কাছিম আলি, সাজিদ আলী, ইরশাদ আলী ও সিদ্দেক আলীর উত্তরাধিকারীর অধিকাংশই আবার মাঠের মালিকানা দাবি করছেন না।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠে ফুটবল খেলা চলছে। এ সময় গ্রামবাসীসহ খেলোয়াররাও মাঠ রক্ষার দাবি করেন।
সাবেক কৃতী ফুটবলার ও শিক্ষক তোফায়েল আহমদ আনা জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা এই মাঠে খেলেছেন। তিনিও খেলেছেন। নতুন প্রজন্মের জন্য যাতে মাঠটি উম্মুক্ত থাকে- এটাই তার দাবি।
স্থানীয় প্রবীণ আফরোজ মিয়াও একই কথা জানান।
গ্রামের বাসিন্দা ও ৮০ খতিয়ানের অংশীদার নুরুল হক বলেন, অতীতকাল থেকে মাঠটি খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত। আমাদের মালিকানা থাকলেও সেটা চাচ্ছি না। এটিকে মাঠ হিসেবেই দেখতে চাই।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী মিঠু মিয়া বলেন, প্রবাস থেকেও আমরা চেষ্টা করছি মাঠটি টিকিয়ে রাখার। আশা করি যারা মাঠের মালিকানা দাবি করছেন, তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবেন।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্দুল মোমিন বলেন, জটি প্রাচীন একটি গ্রাম, মাঠটিও প্রাচীন। ২০০৯ সাল থেকে গ্রামের কিছু লোক মালিকানা দাবি করছেন। জাল দলিলের মাধ্যমে তারা মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন। আমরা আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।
মালিক দাবিদারদের পক্ষে আজিজ আহমদ দিপন জানান, ৫টি খতিয়ানের মধ্যে তিনটি খতিয়ানের অংশ তাদের মৌরশি। বাকি দুটি খতিয়ান খরিদসূত্রে। মালিকানা থাকার পরও একটি পক্ষ এটিকে মাঠ হিসেবে দাবি করছে।
তিনি বলেন, অতীতে আদালতের রায়ও আমরা পেয়েছি। তারা আপিল করেছে। খেলাধুলায় আমরা বাধা দিচ্ছি না। রায়ের অপেক্ষা করছি।