• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সামাজিকতার আড়ালে অসামাজিকতার চর্চা

The Wall News.Com
প্রকাশিত অক্টোবর ৮, ২০২৪
সামাজিকতার আড়ালে অসামাজিকতার চর্চা

মনোয়ার পারভেজ


মানুষ সামাজিক জীব। কেননা মানুষ সমাজে বসবাস করে। তাহলে এই মানুষ শ্রেনির মধ্যেই কি অসামাজিকতা আছে? কেন তারা অসামাজিক হচ্ছে?

এরিস্টটলের মতে – ‘যে সমাজে বাস করে না সে হয় পশু না-হয় দেবতা।’ তবে আমি এখানে তাকে পশু কিংবা দেবতা হিসাবেও উদাহরণ দিচ্ছি না। মানুষকে মানুষ হিসাবেই বিবেচনা করছি, দেবতা হিসাবে নয়; আবার অমানুষ হিসেবেও নয়।

আমার দৃষ্টিতে মানুষ অসামাজিক হয় দু’টি কারণে। এক মানুষের ভিতরে মানসিকতা বিকৃত হলে অসাধুতা লোভ পেয়ে মানুষ সাধারণত অসামাজিক হয়। তাছাড়া অন্যটি হচ্ছে মানুষ সমাজের অবহেলা ও নির্যাতন পেতে পেতেও অসামাজিক হয়। আমার ধারনায় বর্তমান সময়ে মানুষ সমাজের অবহেলা ও অযৌক্তিক সমালোচনার নিমিত্তে অসামাজিক হচ্ছে বেশি। অসামাজিক হচ্ছে বলতে এই কথিত সমাজ থেকে সে দূরে চলে যায়। অথবা সে তার নিজের পথ বেছে নেয়। আর যারা সমালোচনা সহ্য করে দূরে সরে যেতে পারে না তারা বেঁচে নেয় স্বেচ্ছামৃত্যু।

তবে এই সমাজ থেকে দূরে সরে যাওয়া বলতে একেবারেই সবকিছু ছিন্ন করে একাকিত্ব হয়ে যাওয়া জীবনের কথা বলা হচ্ছে না। মানুষ যতই একাকী হোক না কেন সঙ্গী ছাড়া বাঁচা কঠিন। সে কোনো না কোনো প্রয়োজনে সঙ্গী খোঁজেই। তাই এই দূরে থাকা বলতে সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখাকে বুঝাচ্ছি।

আমার সমাজের এক শুভাকাঙ্খী একদিন আমাকে জানালেন, সমাজ নাকি মায়ের পরে মা বা মায়ের দ্বিতীয় ছায়া। আহ্বান জানাচ্ছেন প্রচলিত সমাজে। আমি তাকে সম্মানের সহিত বলব, আপনি যে সমাজের কথা বলছেন এই সমাজ আর এই দেশে টিকে নেই। মায়ের দ্বিতীয় ছায়ার মতো সমাজ কখনও এই দেশে ফিরে আসাও সম্ভব নয়। কেননা আমাদের বর্তমান সমাজটা এতোটাই অসভ্য ! এতোটাই বর্বর ! এতোটাই অন্ধ অনগ্রসর! এতোটাই হিংস্র! এতোটাই বিবেকশূন্! এতোটাই অকৃতজ্ঞ! যে এখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব নয়।

এই সমাজ প্রতিদিন নিরবে মানব হত্যা করছে, করছে অহরহ নির্যাতন, ঝাঁপটানি দিচ্ছে দুর্বলকে, সম্ভাবনাময়তাকে পিছিয়ে দিচ্ছে অযৌক্তিক সমালোচনায়, বিবেক বিক্রি হয়ে গেছে মানবতাহীন আচারণে। এই সমাজে কৃতজ্ঞতার লেশমাত্র নেই ! বর্তমানে বাংলাদেশে যে সমাজব্যবস্থা টিকে আছে এটাকে বলব বিষফোঁড়াময় সমাজ ব্যবস্থা! এই প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার দিকে চেয়ে আমি কোনো আস্থা রাখতে পারি না বা রাখিও না। কেননা আমরা এমন এক সমাজে আছি যেখানে কেউ সুখে থাকলে অন্যদের সহ্য হয় না; অথচ কারো কষ্টের ও হতাশার দুঃসময়ে সময় কাউকে পাশে পাওয়া যায় না!

বরং এই সমাজ তখন মত্ত হয়ে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে ব্যস্ত থাকে। এই সমাজে অত্যাচারীকে কেউ কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। কেননা এই সমাজ চলছে জোর যার মুল্লুক তার স্লোগানে! তাই আমি মনে করি, এই সমাজ থেকে দূরে অনেকে থাকেন সমাজের সমাজপতিদের অত্যাচার থেকে বেঁচে থাকার জন্য। আর সেটাই তার জন্য শ্রেয়। কেননা যে দেশে সমাজতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব নেই সেই দেশে আবার কিসের সমাজ!

এর জন্যে কতিপয় সমাজের অত্যাচারী সমাজপতিরা সমাজ থেকে দূরে থাকা লোকজনকে অসামাজিক বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। তবে মানুষ একসময় অযৌক্তিক সমালোচনা, অবহেলা ও অত্যাচার থেকে অতিষ্ঠ হয়ে বেঁচে থাকার উপায় খোঁজে পায় কতিপয় সমাজ থেকে দূরে থাকে। আর যারা দূরে থাকতে পারে না তারাই আত্মহত্যা করে। আমি বলব, এই অত্যাচার শ্রেনির জন্য নিজের জীবনকে বলি দিবেন কেন? দূরে থাকাই শ্রেয়, নিজের মতো বেঁচে থাকতে শিখতে হবে, তাদের কথা তারা বলুক অসামাজিক বা যা আছে তাই। কানে না নিলে কিছুই যায় আসে না।

সমাজের কর্মকাণ্ড ও আদবকায়দার বিপরীতে চলে দূরে থেকে নিজের মতো বাঁচতে শেখা যদি অসামাজিকতা হয় তাহলে যারা সামাজিকতার আড়ালে অসভ্য বর্বরতা শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে তারা কোথাকার সভ্য? প্রশ্ন কিন্তু থেকে যায় ! তারা কি ‘সামাজিকতার আড়ালে অসামাজিক’ হয়ে অনাচার সৃষ্টির চর্চা করছে না? বর্তমানে সমাজের সামাজিকতার প্রকৃত অর্থ কি তাদের জানা নেই অথবা চর্চাও করার চেষ্টা করছেন? বস্তুত, যা চর্চা করা হচ্ছে সেটা হচ্ছে মুখেই সামাজিকতা কিন্তু অন্তরে ভিন্ন।