ওয়াল নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেটের বেশিরভাগ নেতাই বাসাবাড়ি ছেড়ে চলে যান আত্মগোপনে। দেশের ভেতর গা ঢাকা দিয়ে থাকা নিরাপদ মনে না করে তারা পার্শ্ববর্তী ভারতে পাড়ি দিয়েছেন অনেকে।
সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ও বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ছাড়াও ঢাকার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা বর্তমানে শিলংয়ে অবস্থান করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। বর্তমানে তারা ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন বলে ঘনিষ্টজনরা নিশ্চিত করেছেন। আনোয়ার ও হাবিব দু’জনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও মামলা তাদের পিছু ছাড়েনি। তাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা মামলা দায়ের করছেন।
সিলেটের আদালতে মঙ্গলবার আব্দুন নূর বিলাল নামের এক লোক বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশছাড়ার পর সিলেটের গোয়াইনঘাটের মাতুরতল বাজার এলাকার সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে আনন্দমিছিলে হামলা ও গুলি চালিয়ে সুমন মিয়া (২০) নামের এক তরুণ নিহতের ঘটনায় সিলেট জুডিসিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন নিহতের বাবা আব্দুন নুর বিলাল (৬৫)। তিনি গোয়াইঘাটের মাতুরতল বাজার এলাকার ফেনাইকোনা গ্রামের বাসিন্দা।
মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকজন আসামি হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সিলেট-৪ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান ইমাম উদ্দিন সাদেক ও ঘটনার সময়ের গোয়াইনঘাট থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। এছাড়া মামলায় কয়েকজন বিজিবি সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আবেদন আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে এফ.আই.আর করার নির্দেশে দিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. খোরশেদ আলম।
এদিকে সিলেটের সাবেক এক প্রতিমন্ত্রী, মেয়র ও এক এমপির বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার মহানগরীর আরামবাগ এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় তিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। আরও আসামি করেছেন অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জনকে। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম।
তিনি বলেন, দ্রুত বিচার আইনে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
অন্যদিকে বিদেশে পালানোর সময় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান জামিল ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামীমকে কারগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের ৫ আগস্টের পর হওয়া রাজনৈতিক একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরআগে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করে কোতোয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুনু মিয়া বলেন, বিমানবন্দরে আটক দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাদের রিমান্ডে নিতে পুলিশ আবেদন করেনি।
জানা গেছে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান জামিল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামীম সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে (বিজি ২৩৫) ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের জেদ্দায় যাওয়ার কথা ছিল।
যথারীতি তারা ওসমানী বিমানবন্দরেও পৌঁছান। কিন্তু ইমিগ্রেশনের সময় তাদেরকে আটকে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়। তাদেরকে রেখে বিমানের ফ্লাইটটি ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৭টা ৩২ মিনিটে জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।