বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি (বাঁয়ে) ও স্কটল্যান্ড অধিনায়ক ক্যাথরিন ব্রাইস
ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে নারী টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নবম আসর। শারজায় বিকেল চারটায় উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে মোকাবিলার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের মেয়েদের মিশন। একই ভেন্যুতে রাত আটটায় পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। আমিরাতে এবার মোট ১০টি দল শিরোপার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে। এর মধ্যে এ-গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
বি-গ্রুপে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শারজায় ও দুবাইয়ে গ্রুপ পর্ব ও নক-আউট মিলিয়ে মোট ম্যাচ ২৩টি। দুই গ্রুপের সেরা দুটি করে চারটি দল খেলবে কোয়ার্টার ফাইনালে। দুটি সেমিফাইনাল ১৭ ও ১৮ অক্টোবর। দুবাইয়ে ফাইনাল ২০ অক্টোবর। আগের ৯ আসরে রেকর্ড ৬ বারই চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া!
২০১৪ থেকে পাঁচটি টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে শেষ চার আসরে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি মেয়েরা। এবার সে হতাশা মুছে ভালো কিছুর প্রত্যয় অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির কণ্ঠে, ‘আমি নিজেও চারটি বিশ্বকাপ খেলেছি, এখন পর্যন্ত একটা ম্যাচ জিততে পারিনি। অবশ্যই এবার বিশ্বকাপে আমার ব্যক্তিগতভাবে যেমন লক্ষ্য, তেমনি গোটা দলেরই লক্ষ্য যেন আমরা একটা ম্যাচ জিতে শুরু করতে পারি।’ বলছিলেন তিনি। জ্যোতির নিজের জন্যও এই ম্যাচটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের শততম টি২০ ম্যাচ খেলতে নামছেন তিনি, ‘প্রথমেই আমি জয় চাই। জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে চাই। আমার জন্য ও গোটা দলের জন্য বড় একটি অর্জন হবে। ব্যক্তিগতভাবে ১০০তম ম্যাচ অবশ্যই বড় ব্যাপার। যদি সুস্থ থাকি ও খেলি, তাহলে লক্ষ্য তো এটাই থাকবে, এটা যেন স্পেশাল হয়ে থাকে, স্মরণীয় হয়ে থাকে সবার জন্য।’ বলছিলেন জ্যোতি। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন জ্যোতি।
৯৯টি টি২০ খেলে এ পর্যন্ত ২৭ গড়ে করেছেন ১৯৪৪ রান। আছে ৮ হাফ সেঞ্চুরি ও ১টি সেঞ্চুরি। জ্যোতি ছাড়া আন্তর্জাতিক টি২০তে বাংলাদেশের হয়ে সেঞ্চুরি আছে কেবল ফারজানা হক পিংকির। আগে থেকেই সর্বোচ্চ রানের মালিক জ্যোতির সামনে এবার প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টি২০তে ২০০০ রানের মাইলফলকে পা-রাখার হাতছানি। এজন্য আর মাত্র ৬৬ রান চাই তার। ঐতিহাসিক দিনে আজই সেটি হয়ে গেলে নিশ্চয়ই স্মরণীয় অর্জন হবে।
তবে ব্যক্তিগত লক্ষ্য ছাপিয়ে দলের সাফল্য, জয় দিয়ে আসর শুরু করাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন টাইগ্রেস অধিনায়ক, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য থাকবে অবশ্যই ম্যাচ জেতা। এরপর যখন আমরা ছন্দ পাব, সেই ছন্দেই, সেমিফাইনাল কে না খেলতে চায়! আমাদেরও লক্ষ্য থাকবে তেমন কিছু করা।’ বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটকে পরের ধাপে নিতে বড় মঞ্চে বড় কিছু করার বিকল্প দেখেন না অধিনায়ক, ‘বাকি যে মেয়েরা, বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলতে চায় বা স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশের হয়ে বড় কিছু করবে, তাদের জন্যও আমরা ভালো কিছু করতে চাই।’
স্কটল্যান্ড এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে চারটি টি২০ ম্যাচ খেলে সবটিতেই হেরেছে। তাদের বিপক্ষে জয়টা যেন অবধারিত। তবে প্রতিপক্ষকে মোটেই হালকাভাবে নিতে চান না অধিনায়ক। সেরাটা দিয়েই সাফল্য তুলে নিতে চান। মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপ শুরু ২০০৯ সালে। ২০১৪ সালের চতুর্থ আসরে আয়োজক হওয়ার সুবাদে প্রথমবার অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। টানা পাঁচটি টি২০ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মেয়েদের অর্জন বলতে সেই প্রথমবার শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ড নারী দলের বিপক্ষে পাওয়া দুটি জয়।
এবার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় ভরসা অধিনায়ক-উইকেটরক্ষক জ্যোতি। ওপেনিংয়ে মুর্শিদা খাতুন, মিডল অর্ডারে সুবহানা মশতারিরও ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। আছেন তিন স্পিনিং-অলরাউন্ডার রাবেয়া খান, দিশা বিশ্বাস এবং ঋতু মণি।
পেস আক্রমণে অভিজ্ঞ জাহানারা আলম ও সেনসেশনাল মারুফা আক্তার। স্পিনিং-কন্ডিশনে বাঁহাতি নাহিদা আক্তার, লেগস্পিনার ফাহিমা খাতুনের সঙ্গে তিন অলরাউন্ডার ভাইটাল রোল প্লে করবেন, ‘শারজায় খেলা, আমাদের স্পিন ভালো। যে কোনো কিছুই হতে পারে।’ বলছিলেন অধিনায়ক। আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কার কাছে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ হারলেও দ্বিতীয়টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ জয় টাইগ্রেসদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। মূল মঞ্চে কেমন করে, সেটিই দেখার অপেক্ষা।