সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন আজ
ওয়াল নিউজ ডেস্ক:
আজ সোমবার (২৬ আগস্ট), শুভ জন্মাষ্টমী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব এটি। পঞ্জিকা অনুসারে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হলে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। দেশজুড়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে এ দিনটি পালন করে হিন্দু সম্প্রদায়।
সনাতন ধর্ম মতে, অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সুজনের রক্ষায় কৃষ্ণ যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন করেন। অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য শ্রীকৃষ্ণ মথুরার অত্যাচারী রাজা কংসকে হত্যা করে মথুরায় শান্তি স্থাপন করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের ভাব ও দর্শন যুগ যুগ ধরে হিন্দু সমাজ ও সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত। কৃষ্ণের প্রেমিকরূপের পরিচয় পাওয়া যায় তার বৃন্দাবন লীলায়, যা বৈষ্ণব সাহিত্যের মূল প্রেরণা।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাণীতে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা এ দেশের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা গড়ে তুলি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর সব ধর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমাজে মানুষের অধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণ সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন।
তিনি বলেন, সর্বদা মানবতা ও সত্যের পতাকা বহনকারী শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই ন্যায় প্রতিষ্ঠায় স্বমহিমায় আবির্ভূত হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শ্রীকৃষ্ণের দর্শন ও মূল্যবোধ সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সবাইকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে সমাজ-সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হচ্ছে ধর্মীয় সম্প্রীতি। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক অনাদিকাল থেকে মজবুত ভিত্তির ওপর স্থাপিত।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন শুভ জন্মাষ্টমী অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সব ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবের মূলবাণী মানুষে মানুষে প্রীতি, সৌহার্দ্য ও শুভেচ্ছাবোধ। সকল কালে সকল যুগে বিভিন্ন ধর্মের প্রবক্তাগণ মানুষকে অসত্য, অন্যায় ও দুস্কর্ম থেকে দূরে থাকতে উপদেশ দিয়েছেন। সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তারা সত্য ও ন্যায়ের বাণী মানুষকে শুনিয়েছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণও একই উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে জনসমাজে বিরাজমান অন্যায়কে পরাস্ত করে শান্তি ও কল্যাণ স্থাপন করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দুরাচার বৃদ্ধি পেলে দুস্কৃতিকারীদের বিনাশে শ্রী কৃষ্ণ অবতার রূপে পৃথিবীতে আসেন।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রবিবার (২৫ আগস্ট) রাতে এক বিবৃতিতে এ শুভেচ্ছা জানান।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর জীবনাচারণ ও কর্ম দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও বিদ্বেষ দূর করে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল শ্রীকৃষ্ণের মূল দর্শন। আমাদের মহান সংবিধানেও ন্যায় ও সাম্যের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও সমাজে সমতায় বিশ্বাসী।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সোমবার সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ইসকনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এ উপলক্ষে ২৫ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, ভজন কীর্তন, ভোগ আরতি, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।