ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে টিউবওয়েল, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের চাল ও টিন দেওয়ার নাম করে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন উপজেলা পরিষদের নৈশপ্রহরী মোরাদ হোসেন। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা কার্যালয়ের কাউকে কিছু না বলে লাপাত্তা রয়েছেন তিনি।
চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন পন্থায় সরকারি অর্থ লুটপাটসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে নৈশপ্রহরী মোরাদের বিরুদ্ধে। মোরাদ হোসেন কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাদে হস্তিদুর গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে। তিনি ২০১৬ সাল থেকে ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদে নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জানা গেছে, নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব থাকলেও তিনি ছিলেন উপজেলা পরিষদের অলিখিত কর্মকর্তা। কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে অফিস করে জনসাধারণকে ধোঁকা দিয়ে নিজেকে ইউএনওর সহকারী বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন তিনি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে টিউবওয়েল, টিনসহ নানা উপকরণ দেওয়ার নাম করে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও উপজেলা পরিষদের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দায়িত্বে থাকা কালে নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ছিল তার মূল লক্ষ্য।
এসব বিষয়ে একাধিকবার প্রতিবাদ হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় দাপট খাটিয়ে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ায় ইউপি সদস্যসহ ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা ফিরে পেতে দীর্ঘদিন উপজেলা পরিষদে গেলেও কোনো সুফল পাননি। মোরাদ কোথায় আছেন এই বিষয়টিও জানেন না উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারা।
তবে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, অর্থ আত্মসাৎ করে মোরাদ প্রবাসে পালিয়ে গেছেন। কোন দেশে মোরাদ অবস্থান করছেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। মোরাদের খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে (০১৩০২৭৭৭৪৩৮) এই নম্বর থেকে স্থানীয় এক সাংবাদিককে কল দিয়ে অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকার করে ১৫ জনের অর্থের তালিকা মোরাদ তার কাছে দিয়ে গেছেন বলে তিনি দাবি করেন। শিগগিরই এসব মানুষের অর্থ ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিগত ২ মাস থেকে এই ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের ইলাশপুর গ্রামের মোহন মিয়ার কাছ থেকে ২৫ হাজার, উমরপুর ইউনিয়নের মান্দারুকা গ্রামের পেয়ারা বেগমের কাছ থেকে ১০ হাজার ৫০০, ইউপি সদস্য হুসনা বেগমের কাছ থেকে ২০ হাজার, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লেবু মিয়ার কাছ থেকে ৯০ হাজার, মহিলা ইউপি সদস্য চামেলী ধরের কাছ থেকে ৩২ হাজারসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন মোরাদ।
ভুক্তভোগী পেয়ারা বেগম বলেন, কয়েক মাস আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে টিউবওয়েলের জন্য লিখিত আবেদন নিয়ে গেলে নৈশপ্রহরী মোরাদ হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে আবেদন দিয়ে যান, আমি আপনার এটি জমা দেব।’ কিছুদিন পর মোরাদ হোসেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাকে বলেন, ‘টিউবওয়েলের জন্য দশ হাজার পাঁচশ টাকা জমা দিতে হবে।’ টাকা নিয়ে উপজেলা পরিষদের দোতলায় গেলে মোরাদ এগিয়ে এসে বলেন- ‘আপনার টিউবওয়েল হয়ে গেছে, টাকা দিন।’ তখন মোরাদকে রশিদের কথা বললে তিনি ধমক দিয়ে বলেন- ‘আমি সরকারি চাকরি করি, আপনার সামান্য টাকায় আমার লোভ নেই।’ তার হাতে নগদ ১০ হাজার পাঁচশ টাকা দিলে তিনি বলেন- ‘কালকে আপনাকে জানাচ্ছি।’
দুইদিন পর মোরাদের ফোন নম্বরে কল দিলে তিনি আবারও বলেন, ‘আরও ১৫ দিন পর টিউবওয়েল আপনার বাড়িতে পাবেন।’ এভাবে কয়েক মাস পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমার টিউবওয়েল বা টাকা কিছুই পাইনি। শুনেছি তিনি অনেক মেম্বার ও সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে ভেগে গেছেন। আমরা গরিব মানুষ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে এমন প্রতারণার সুষ্ঠু বিচার চাই।
লাপাত্তা হওয়ায় এসব অভিযোগের বিষয়ে মোরাদ হোসেনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপমা দাশ বলেন, মোরাদ অনেক দিন ধরে পলাতক। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, টিউবওয়েলের জন্য মোরাদকে কেন টাকা দেবে? এর একটি সরকারি প্রক্রিয়া আছে। মোরাদ যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে থাকে, এর দায় সরকার নেবে না। মোরাদ সরকারি নিয়মিত নিয়োগের নয়, আউটসোর্সিং নিয়োগ। যেটা কোম্পানির মাধ্যমে হয়ে থাকে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।