ওয়াল নিউজ ডেস্ক:
গত ১৮ জুলাই থেকে সিলেটে কোটা ও সরকার পতন আন্দোলন যতই তীব্র হয় ততই বাড়তে থাকে সংঘাত সংঘর্ষ। এতে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন স্থানে তিন শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে নিহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি ছাত্র জনতা। যাদের বেশির ভাগই প্রথম অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসাপাতালেই চিকিৎসার জন্য শরণাপন্ন হন। প্রথম দিকে ওসমানী হাসপাতাল এসব রোগীদের তেমন গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ না করায় অনেকেই আবার প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ফলে সিলেটের, নর্থ ইস্ট ইবনে সিনা, উইমেন্স, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। কেউ কেউ এসব হাসপাতাল ক্লিনিকে মারাও গেছেন। তবে ৪ আগস্ট থেকে ওসমানী হাসপাতালে রোগী ভর্তির চিত্র বদলে যায়। সেখানে একে একে আড়াইশ রোগী ভর্তি হন। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন গুলিবিদ্ধ। এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েকজন মারা গেলেও বাকীরা ছিলেন চিকিৎসাধীন। সারাদেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতারা হাসপাতালগুলোতে চাপ দেয়ার কারণে চিকিৎসাধীনদের জন্য বিশেষ তদারকি শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষ।
ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোয়াইনঘাটের এক কিশোরের চাচা আব্দুল রহিম এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রামের সব মানুষ আন্দোলনের ডাকে গেছে। তাদের পরিবারের অবুঝ ছেলেটিও গিয়েছিলো। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় ২০দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু তারা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না সরকার বা দল থেকে। ফলে তার ভাতিজার মতো অনেক গরিব আছেন যাদের হাসপাতালে থাকাটাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। তিনি সরকারের কাছে সুচিকিৎসার পাশাপাশি এদের পরিবারগুলোতে আর্থিকভাবে সহায়তা করার দাবি তাদের।
১৯ জুলাই সিলেট নগরের বন্দর বাজারে গুলিবিদ্ধ হন বিশ্বনাথের আমতৈল গ্রামের ছালে আহমদ নামের এক রিকশা চালক। মাথা ও কানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে ভর্তি হন একটি হাসপাতালে। পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আন্দোলনে ছিলেন না তিনি। যাত্রী নিয়ে সোবহানীঘাট কাঁচাবাজার থেকে বন্দরবাজারে আসামাত্রই তিনি গুলির মুখে পড়েন। ছালেহ আহমদ জানান, আয় রোজগারের জন্য তিনি ছাড়া আর কেউ নেই তাঁর ৭ সদস্যের পরিবারে।
এদিকে সিলেটে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ইবনে সিনা হাসপাতালে। এমনটি দাবি সেখানকার কর্মীদের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান তারা ব্িেশরভাগ গুলিবিদ্ধ রোগীর কাছ থেকে কোনো বিল রাখেননি। মানবতার খাতিরে অনেকের চিকিৎসা দিয়েছেন। ছররা গুলি বের করে দিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসক-নার্সরা।
সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ড. মাহবুবুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের ডাক্তার-নার্সরা গুলিবিদ্ধ রোগীদের সেবায় অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। আমি নিজে অফিস থেকে উঠতে পারছি না। সার্বক্ষণিক তাদের খোঁজ রাখতে হচ্ছে। বিশেষ করে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক রোগী ডিসচার্জ নিয়েছেন। যাদের সবাই গুলিবিদ্ধ ছিলেন। আর বর্তমানে ৩০/৩৫ জন আছেন চিকিৎসাধীন। এদের কেউ কেউ নাকে মুখে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে এদের কেউই এখন আর গুরুতর অবস্থায় নেই। এবং সেখান থেকে কারো স্বাস্থ্যের অবনতির কোনো আশংকা নেই।