• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

হার জিত নিয়ে এখন ভাবেন না নাজমুলরা

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
হার জিত নিয়ে এখন ভাবেন না নাজমুলরা

ওয়াল নিউজ ডেস্ক

নতুন সিরিজ—চেন্নাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের প্রতিনিধিদের মুখ থেকেই কথাটি এল। নতুন সিরিজ মানে সবকিছু নতুন, অতীত সাফল্য বড়জোর আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে; কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে ওসব কাজে আসবে না। ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর আগের সংবাদ সম্মেলনে এসে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশকে। তা যে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের জন্য, সে তো জানাই। এরপর একটু সতর্কবার্তার সুরেই মনে করিয়ে দেন, (ভারতের বিপক্ষে) এটা কিন্তু নতুন সিরিজ। এরপর বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এসেও মনে করিয়ে দিলেন, এটা কিন্তু নতুন সিরিজ।
আসলে এটা যে নতুন সিরিজ, সেটাও কি কারও অজানা? কিন্তু বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার কারণ সম্ভবত পাকিস্তানের মাটিতে আগস্ট–সেপ্টেম্বরে দুই টেস্টেই জয়ের অভাবনীয় সাফল্য। সেই রেশ কেটেছে কি না, তা যেন কোনো পক্ষই ঠিক নিশ্চিত নয়! সে যাহোক, নাজমুলকে করা প্রথম প্রশ্নেও কিন্তু ছিল পাকিস্তান সিরিজের প্রসঙ্গ। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তান ২৭৪ করার পর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই ধ্বংস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তুলে নেওয়া সেই জয়ের পর সবার প্রত্যাশাটা এমন যে বাংলাদেশ এখন যেকোনো অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। প্রশ্নকর্তা এটুকু বলে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতকে শ্রেয়তর দল বলে জানতে চাইলেন, এই সিরিজে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি কেমন, ড্রেসিংরুমের পরিবেশটাই বা কেমন?
ফল নিয়ে যদি বলেন, পঞ্চম দিনে শেষ সেশনে গিয়ে আমাদের রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা। তার আগ পর্যন্ত আমরা নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব।
নাজমুলের উত্তর, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। যেটা বললেন, এটা আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। এটা নতুন সিরিজ। ড্রেসিংরুমের বিশ্বাস, আমরা এখানেও খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব। আমরা ফল নিয়ে ভাবছি না। প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করতে চাই।’
ভারতের শক্তিমত্তা বিবেচনায় তাদের মাঠে টেস্ট জেতা যেকোনো বিচারেই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। নাজমুলও সে কথা স্বীকার করলেন, ‘অবশ্যই। সবচেয়ে কঠিন একটি প্রতিপক্ষ, এটা আমরা সবাই স্বীকার করি। কিন্তু প্রতিপক্ষকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে নিজেদের নিয়ে চিন্তা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দলটার সেই সামর্থ্য আছে যে এখানে ভালো ক্রিকেট খেলা। পাঁচ দিনের একটা ম্যাচ, এই পাঁচটা দিন আমরা কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। লক্ষ্য তো একটাই থাকে আমরা প্রতিটি ম্যাচটা জিতব, সব আন্তর্জাতিক দলেরই এই লক্ষ্য থাকে। আমাদেরই একই লক্ষ্য। জেতার জন্য যে জিনিসগুলো করা প্রয়োজন, আমরা ওগুলোই করব। ফল নিয়ে যদি বলেন, পঞ্চম দিনে শেষ সেশনে গিয়ে আমাদের রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা। তার আগ পর্যন্ত আমরা নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব।’
ভারতের মাটিতে এ পর্যন্ত তিনটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। নাজমুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই সফরে ভালো করতে পারলে ভারতে আরও বেশি খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে কি না? এর উত্তরে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘অবশ্যই এ ধরনের সিরিজ যদি ভালো করতে পারি, প্রতিটি দলই হয়তো আমাদের সঙ্গে আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে চাইবে। এটা একটা অনেক বড় সুযোগ যে এখানে আমরা কত ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। আশা করি, বাংলাদেশ দল এখন যেভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে, আমার মনে হয় সব দল আমাদের সঙ্গে খেলার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।’
আমরা কন্ডিশন এবং প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবছি না। আমরা শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবছি। নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা ভালো হবে।
বাংলাদেশ দলের বোলিং শক্তি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল নাজমুলের কাছে। প্রথমেই তিনি আবারও বলে নেন, ‘যেটা বলেছি আমি ফল নিয়ে ভাবছি না। প্রক্রিয়াটা নিয়ে ভাবছি।’ এরপর বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘যে পাঁচ–ছয়জন বোলার আছে তারা সবাই দীর্ঘ সময় ধরে ভালো জায়গায় বল করতে পারে। আশা করি, পাঁচ–ছয়জন বোলার নিজেদের কাজটা করবে।’
আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় দল ভারত। আর ঘরের মাঠে রোহিত শর্মার দল তো আরও অনেক বেশি শক্তিশালী। নাজমুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভারতের কন্ডিশনে ভারতের বিপক্ষে ঠিক কী কী চ্যালেঞ্জ তিনি আশা করছেন? বাংলাদেশ অধিনায়কের উত্তর, ‘আমরা কন্ডিশন এবং প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবছি না। আমরা শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবছি। নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচটা ভালো হবে।’
নাজমুলের কাছে পরবর্তী প্রশ্ন ছিল, আগে বাংলাদেশকে আবেগপ্রবণ দল মনে করা হতো, সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি ঘটেছে…। বাংলাদেশ অধিনায়কের উত্তর, ‘হ্যাঁ, কারণ অনেকেই ১০–১৫ বছর ধরে খেলছে। বেশির ভাগই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, তাই কয়েক বছর ধরে কেউ সেভাবে আবেগাক্রান্ত হয় না। আমরা এখন নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। শুধু নিজেদের খেলা নিয়েই ভাবি। হারলে কিংবা জিতলে কী হবে, সেটা নিয়ে ভাবি না। নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করি।’
আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে নাজমুল বলেছেন, ‘উইকেট যতটুকু দেখে বুঝেছি, ভালো একটি উইকেটই হবে। খুব বেশি স্পিন বা পেস বোলিং, এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।’ নাজমুলের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভারত কিংবা পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দল অতীতে বেশ আবেগাক্রান্ত থাকত, কিন্তু প্রতিপক্ষের স্পিনারদের কখনো বিশ্লেষণ করে এসেছে কি না?
নাজমুলের উত্তর, ‘আমি মনে করি, প্রত্যেক খেলোয়াড়ই এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করে। দেশে অনুশীলনের সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়।’