• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজারে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আওয়ামী লীগ নেতারা

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪
বিয়ানীবাজারে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আওয়ামী লীগ নেতারা

ওয়াল নিউজ ডেস্ক

সিলেটের বিয়ানীবাজারে তিনটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে যেতে পারছেন না ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা স্থানীয় হাটবাজারে। দিন কাটে যেমন-তেমন কিন্তু রাত হলেই ভর করে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর আতঙ্ক। গাড়ির শব্দ শুনলেই আঁতকে উঠেন সবাই- এই বুঝি এলো পুলিশের গাড়ি। নির্ঘুম রাত কাটছে সবার, কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পারায় অনেকে ভোগছেন আর্থিক সংকটে। এমনকি পরিবার চালাতে স্বামীর বদলে দোকানে বসতে বাধ্য হচ্ছেন কয়েকজনের স্ত্রী।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যাবার পরপরই বিয়ানীবাজার উপজেলা সদরে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করেন। এদের সাথে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও। এ সুযোগে একটি পক্ষ বিয়ানীবাজার থানা ও উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অফিসে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এর মধ্যে শেষ বিকালে থানায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারিরা পুলিশ সদস্যদের আক্রমণে চেষ্ঠা করলে তাদের ঠেকাতে পুশি গুলিবর্ষণ করে। এসময় পুলিশের গুলিতে প্রান হারান তিন যুবক। এ ঘটনার ১৫ দিন পর গত ২০ আগস্ট বিয়ানীবাজার থানায় ৭৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৬ আগস্ট সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদকে প্রধান আসামি করে অরো অর্ধশত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এর মধ্যে একটি মামলার বাদী পুলিশের গুলিতে নিহত বিয়ানীবাজার পৌরসভার নয়াগ্রাম এলাকার ময়নুল ইসলামের স্ত্রী শিরিন বেগম। একইদিন গুলিতে নিহত নয়াগ্রামের রায়হান উদ্দিনের বড়ভাই বোরহান উদ্দিন বাদী হয়ে সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদকে প্রধান আসামি করে আরো ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।
প্রতিটি মামলায় আসল ঘটনা এড়িয়ে গিয়ে প্রকৃত হত্যাকারীদের আসামি না করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, প্রবাসী ও সাংবাদিকদের আসামি করা হয়। গত ২০ আগস্ট দায়ের করা প্রথম মামলায় ৭৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়, এদের মধ্যে ৮জন প্রবাসী ও ৬জন সাংবাদিকও রয়েছেন। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, গত ৫ আগস্ট দুপুরের আগেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপজেলা সদর ছেড়ে চলে যান। শহরে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যক্তি বা নেতাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়ে কেটে পড়েন অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী জানান, থানায় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কারা হামলা করেছে আমরা দেখেছি। এখন মামলায় আসামিদের নাম দেখে অবাক হচ্ছি।
মামলার বাদী নিহত তারেক আহমদের মা ইনারুন নেছাও আসামিদের নাম দেখে অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, কিছু লোক আমার কাছে গিয়ে আমাকে সাহায্য দেয়ার নাম করে আমার স্বাক্ষর নিয়ে এসে এই মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আসামি হিসেবে যাদের নাম দেয়া হয়েছে এরা কেউই আমার ছেলের হত্যাকারী নয়। আমার ছেলেকে পুলিশ হত্যা করেছে। আমি এই মিথ্যা মামলা পরিচালনা করব না।
অন্য আরেকটি হত্যা মামলার আসামি তালিকায় একজন ব্যবসায়ী বলেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে দোকানে যেতে পারছি না, তাই পরিবার চালাতে বাধ্য হয়ে আমার স্ত্রী দোকানে বসছেন। এভাবে মিথ্যে মামলা দিয়ে কেন আমাদের ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে? আওয়ামী লীগ করলেই কি এভাবেই মামলা দিতে হবে?
বিয়ানীবাজারের প্রবীণ সাংবাদিক খালেদ সাইফুদ্দিন জাফরী বলেন, কোনো মানুষই রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়, সাংবাদিকরাও কোনো না কোনো দল সমর্থন করেন। তবে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা নিরপেক্ষ থেকে সংবাদ পরিবেশন করেন। হত্যা মামলায় সাংবাদিকদের আসামি করা নিন্দনীয়, আমরা এই মিথ্যা মামলা থেকে সাংবাদিকদের বাদ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অকিল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, তিনটি মামলারই তদন্ত চলছে। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্ঠাও হচ্ছে। তবে লোকবল সংকটের কারণে অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না। আসামির তালিকায় থাকা সাংবাদিকদের বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে। জড়িত থাকলে আইনী ব্যবস্থা এবং সম্পৃক্ততা না থাকলে অব্যাহতি দেয়া হবে।