
ওয়াল নিউজ ডেস্ক
আমাদের সমাজে স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রায়শই মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া কিছু জিনিসের মালিকানা নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। যেমন- স্ত্রী মারা গেলে স্বামী দাবি করেন যে, নির্দিষ্ট কোনো জিনিস তার নিজের মালিকানাধীন ছিল, স্ত্রীর নয়। অন্যদিকে, স্ত্রীর অন্য ওয়ারিশরা বলেন, জিনিসটি স্ত্রীর ছিল এবং এখন তা ত্যাজ্যসম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে। একইভাবে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী দাবি করতে পারেন যে, কোনো নির্দিষ্ট সম্পত্তির মালিক তার স্বামী ছিলেন না, বরং তিনিই এর মালিক। কিন্তু স্বামীর অন্য ওয়ারিশরা এই দাবি অস্বীকার করতে পারেন। এ ধরনের জটিল পরিস্থিতিতে শরিয়তের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যা বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা করবে।
সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মীমাংসা
মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে প্রথমেই দেখতে হবে, জিনিসটির প্রকৃত মালিক কে ছিলেন তা সাক্ষী-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় কি না।
যদি নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, জিনিসটির মালিকানা মৃত ব্যক্তির ছিল, তা হলে তা অবশ্যই ত্যাজ্যসম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং মিরাসের আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টিত হবে। আর যদি সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে জীবিত স্বামী বা স্ত্রীর মালিকানা প্রমাণিত হয়, তা হলে সম্পূর্ণ জিনিসটির মালিকানা তারই থাকবে।
সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকলে করণীয়
যদি কোনো সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকে, তখন জিনিসটির ধরন দেখে মালিকানা নির্ধারণ করা হবে-
নারী-সংশ্লিষ্ট বা নারীদের ব্যবহার্য বস্তু: যদি বিরোধপূর্ণ জিনিসটি নারীদের ব্যবহারের উপযোগী কোনো অলংকার, পোশাক, প্রসাধনী বা অন্য কোনো সামগ্রী হয়, তা হলে ধরে নেওয়া হবে এটি স্ত্রীর মালিকানাধীন বস্তু হিসেবে গণ্য হবে। পুরুষসংশ্লিষ্ট বা পুরুষদের ব্যবহার্য বস্তু: যদি জিনিসটি পুরুষদের ব্যবহারের উপযোগী কোনো সামগ্রী হয়, তা হলে এটি স্বামীর মালিকানাধীন বস্তু বলে গণ্য হবে।
উভয়ের ব্যবহার্য বা ব্যবসায়িক সম্পদ: যদি জিনিসটি এমন হয় যা নারী-পুরুষ উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন (যেমন- আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিকস) অথবা যদি এটি ব্যবসা-বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট কোনো সম্পদ হয়, তা হলে ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী এটি স্বামীর সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে।
মোট কথা, স্বামী বা স্ত্রী কারও পক্ষে যদি শরিয়তসম্মত প্রমাণ (যেমন- লিখিত দলিল, বিশ্বস্ত সাক্ষী) পাওয়া যায়, তা হলে সম্পদ তার বলে সাব্যস্ত হবে। যদি কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়, তবে নির্দিষ্টভাবে নারীদের ব্যবহার্য হলে তা স্ত্রীর বলে গণ্য হবে, অন্যথায় স্বামীর বলে বিবেচিত হবে। এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যুর পর সৃষ্ট মালিকানা বিরোধগুলো ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাধান করা সম্ভব হবে এবং পারিবারিক কলহ অনেকাংশে এড়ানো যাবে।