
The Wall News.Com
বাংলাদেশে ওটিটির আগমন ও প্রসার ঘটেছে কিছুটা বিলম্বে। তবু বেটার লেট দ্যান নেভার। বলতে গেলে, শোবিজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল ওটিটি। নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীদের কাজের পরিসর বেড়েছে, নিজেদের প্রমাণের সুযোগ বিস্তৃত হয়েছে; আবার দর্শকও পেয়েছে নতুন ধারার সব কনটেন্ট দেখার সুযোগ।
কিন্তু সে সম্ভাবনা পোক্ত বাস্তবতায় রূপ নেওয়ার আগেই যেন ঝিমিয়ে পড়ল। বছরের অষ্টম মাস চলছে, এর মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ও সফল কনটেন্ট পাওয়া যায়নি।
এ বছর হইচইতে এসেছে মোটে দুটি সিরিজ—আশফাক নিপুণের ‘জিম্মি’ ও অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’। প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টি নিয়ে কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েছে দর্শক।
সিরিজের কিছু দৃশ্য ভাইরালও হয়েছিল। এ ছাড়া চরকির ওয়েব ছবি ‘ঘুমপরী’ পেয়েছিল মন্দের ভালো সাড়া। ‘তাকদীর’ দিয়ে বাজিমাত করেছিলেন সৈয়দ আহমেদ শাওকী। এ বছর তাঁর তারকাবহুল সিরিজ ‘গুলমোহর’ এলেও পায়নি সাফল্য।
শুরুর দিকে দারুণ সব কনটেন্ট দিয়ে আলোচনায় এসেছিল ‘বিঞ্জ’। অনেক দিন হলো তাদের প্ল্যাটফর্মেও কোনো আলোচিত কনটেন্ট আসেনি। এ ছাড়া বঙ্গ, আইস্ক্রিন, দীপ্ত প্লে-সহ আরো যেসব প্ল্যাটফর্ম, সেগুলোর কোনো কনটেন্ট এ বছর আলোচনায় আসেনি। অরিজিনাল কনটেন্টের অভাব মেটাতে বড় পর্দার ছবিতে মনোযোগ দেখা যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মগুলোর। প্রায় সব প্ল্যাটফর্মেই নিয়মিত মুক্তি পাচ্ছে বড় পর্দার আলোচিত ছবি।
পাশাপাশি কিছু প্ল্যাটফর্মে উঠে আসছে টিভি নাটকও। ওটিটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে হইচই বাংলাদেশের প্রধান সাকিব আর খান বলেন, ‘দেশের অন্যসব ব্যবসায়ী যে স্ট্রাগল করছে, আমরাও তেমনই। ইনফ্যাক্ট শুরু থেকেই আমাদের স্ট্রাগল চলছে। কারণ এটা সাবস্ক্রিপশন বেজড প্ল্যাটফর্ম, আর বাঙালি তো ফ্রি খেতে চায়। অথচ সাবস্ক্রিপশন ফি ছাড়া আমাদের তেমন আয় নেই। তার ওপর পাইরেসির ঝামেলা। একটা কনটেন্ট রিলিজ হতে না হতেই পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। নেটফ্লিক্স টিকে থাকতে পারছে। কারণ বিশ্বজুড়ে তাদের ২৫ কোটির বেশি সাবস্ক্রাইবার। বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট তাদের। আমাদের আরেকটা সমস্যা হলো, প্রশাসনিক। এটা দেখানো যাবে না, ওটা করা যাবে না। ক্রিয়েটিভ ফ্রিডম নেই।’
কিন্তু শুরুটা তো সম্ভাবনাময় ছিল। হঠাৎ এমন হচ্ছে কেন? ‘উত্থান সহজ কিন্তু ধরে রাখা কঠিন। তবু আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত আমরা কনটেন্টে একটা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখেছি। আর দেশের অর্থনীতিতে আমাদেরও তো ভূমিকা আছে। একেকটি কনটেন্টে ৩০-৪০ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে, আমাদের অফিসে কতগুলো মানুষ কর্মরত, প্রত্যেকেই তো বাংলাদেশের। প্রতিটা সাবস্ক্রিপশনের একটা অংশ সরকারের রাজস্ব খাতে যায়। তাহলে কাজের ক্ষেত্রে আমরা যদি স্বাধীনতাটা না পাই, কিভাবে হবে? এখনো পাইপলাইনে অনেক কনটেন্ট। কিন্তু একপ্রকার নিরুপায় হয়েই আমরা কাজের সংখ্যা ও গতি কমিয়ে দিয়েছি’—বললেন সাকিব।
সব মিলিয়ে আমাদের অবস্থা উন্নতির দিকেই বলতে পারি। তা ছাড়া চ্যানেল আইয়ের ২৫ বছরের একটা জার্নি, প্রচুর কনটেন্ট। সেখান থেকে আমরা দারুণ দারুণ কিছু নস্টালজিক কনটেন্ট আইস্ক্রিনে দিচ্ছি। শিশুদের জন্যও অ্যানিমেটেড সিরিজ চলছে। আর বড় পরিসরের অরজিনাল সিরিজ বা ফিল্ম বছরে একটা-দুইটা নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে। দেখুন, কোনো প্ল্যাটফর্ম চালু হওয়ার পর প্রচুর কনটেন্ট বানাতে হয়। কারণ তার ভাণ্ডার শূন্য। ফলে প্রথম এক-দুই বছরে প্রচুর কনটেন্ট আসে। এরপর বাজেট ও দর্শকের চাহিদা অনুসারে সংখ্যা কমে আসে। তবে সংখ্যা কমলেও মান কিন্তু ক্রমে বাড়ছে বলেই আমার মনে হয়।’