• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটের ঐতিহ্যের নিদর্শন ‘ছিকড় মাটি’, যায় প্রবাসেও

The Wall News.Com
প্রকাশিত এপ্রিল ১৮, ২০২৫
সিলেটের ঐতিহ্যের নিদর্শন ‘ছিকড় মাটি’, যায় প্রবাসেও

মহসিন রনি


দেখতে বিস্কুটের মতো, আর তা যদি হয় পোড়া মাটির তৈরি সেটা আবার কেমন! শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টি সত্য। কোনো একটা সময় ক্ষুধা নিবারণের জন্য এটি তৈরি হতো। এখনও অনেক মানুষ সেই মাটির বিস্কুট খায়। সিলেট অঞ্চলে এই বিস্কুট ‘ছিকর’ নামে পরিচিত।

একটা সময় ছিকড় খাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ ও নানান যুক্তি ছিল। তার ভেতর ক্ষুধা নিবারণ যেমন ছিল, আবার ছিল প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের প্রাপ্তি ও রক্তস্বল্পতা রোধের পুরোনো ধ্যান ধারণা। এর পাশাপাশি একটু বেশি জনপ্রিয়তার নজরে থাকতো সন্তানসম্ভবা নারীদের কাছে। প্রচলিত ধারণা ছিল, ছিকর রক্তশূন্যতা দূর করে, খনিজের যোগান দেয়। গর্ভাবস্থায় যথেষ্ট প্রয়োজন হয় খনিজের। কিন্তু জিওল মাছ (শিং-মাগুর-কই) খেতে পারার সামর্থ্য সবার ছিল না।

তাই সেই জায়গা করে নিয়েছিল ছিকড়। এর ছিল আলাদা স্বাদ। অনেক ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারাও স্বাদের কারণে ভক্ত হয়ে যেত। সন্তানসম্ভবা নারীসহ অনেকেরই বেশ পছন্দের মাটির তৈরি বিস্কুট ছিকরের। তাদের বিশ্বাস ছিল, এটি খেলে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবার অনেকের মতে, শুধু ক্ষুধা নিবারণের জন্যই নয় বরং এক ধরনের অভ্যাসের বশেই লোকজন ছিকর খেতেন। যদিও এসব ধারণার পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা সমর্থন মেলেনি।

সিলেট নগরের চাদনীঘাট এলাকায় দীর্ঘ কয়েক যুগের বেশি সময় থেকে বিক্রি হয়ে আসছে এসব ছিকড় মাটি। যেখানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে নিয়ে যান সিলেটিরা এমনটাই জানান ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী রহিম মিয়া বলেন, ছিকড় মাটির এই বিস্কুট পুড়িয়ে তেতুল এবং বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। যা প্রবাসেও নিয়ে যান সিলেটিরা। কেজি প্রতি প্রায় ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আমরা বিক্রি করে থাকি।

পুরুষের তুলনায় মহিলা ক্রেতাদের সংখ্যা একটু বেশি। তবে ক্রেতা সাধারণ বেশির ভাগ সময়েই ১০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পরিমাণের ছিকর কেনেন। কে, কেজি প্রতি ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় এই খাবারের জিনিসটি। তবে বৈজ্ঞানিক কিংবা চিকিথসা বিজ্ঞানে এর কোনো কথা উল্লেখ না থাকলে এখনো এটি বেশ জনপ্রিয় এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।

চিকিৎসক ও সাংবাদিক ইকবাল মুন্সি বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম মরহুম এম সাইফুর রহমানের মতো লোকেরা এই ছিকড় মাটির বিস্কুট পছন্দ করতেন। আমরা খেতাম এটি আমাদের সিলেটের ঐতিহ্যের অংশ। দেশের বেশ কিছু এলাকায় প্রচলিত আছে ছিকড়। বর্তমানেও অনেকেই শখের বশে এই মাটির বিস্কুট খেয়ে থাকেন।