জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির মত একইভাবে যেন লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষকদের স্থান শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে না হয়। কারণ এই লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক রাজনীতি অন্দরমহল থেকে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। কোনো সম্মানিত শিক্ষক যদি শিক্ষকতার থেকে বেশি রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেন তখন আপনারা নিজেদের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করবেন।
শনিবার (৯ অক্টোবর) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে মতবিনিময় পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
সারজিস আলম বলেন, সত্যি কথা বলতে ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সিলেটের সাস্টের অবদান অনেক। একইসাথে একটি উপজেলার নাম আমরা স্মরণ করতে চাই, সেটি হল গোলাপগঞ্জ। যেখানে গত ৪ আগস্ট একদিনের হামলায় ৭ জন বীরদেরকে আমরা হারিয়েছি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা গর্ববোধ করতে পারেন এই কারণে যে= আপনারাই (সাস্টিয়ান) সর্বপ্রথম অভ্যুত্থানের পর ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন। এই একটি ক্ষেত্রে পুরো বাংলাদেশ আপনাদেরকে রোল মডেল হিসেবে নিতে চাই আমাদের জায়গা থেকে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, আমরা চাই খুব শীঘ্রই আপনাদের ভোটে নিরপেক্ষ প্রতিনিধি নির্বাচিত হোক কোনো দলীয় ব্যানার ছাড়া; আর সেটি অবশ্যই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে আপনাদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রতিনিধিকে আপনারা নির্বাচিত করবেন।
দেশের মেধাবীরা যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চা শুরু করতে না পারেন তাহলে দু’টি সংকট আসতে পারে বলেও জানান সারজিস আলম। তার মতে, একটি হচ্ছে- এই মেধাবীদের প্রতিনিধিত্ব আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে দেখা যাবে না আর অপরটি হচ্ছে এতদিন থেকে যে চর্চাটি দেখে এসেছি (নেতার তেলবাজি করা, তোষামোদি করা, নেতার জন্য শপিং করা, নেতার বাইকে রাতে ঘোরঘোর করা) সেগুলো আবার ফিরে আসবে। এই চর্চাগুলো আমরা বন্ধ করতে চাইলে, সবার আগে দেশের মেধাবীদের সম্মিলনের স্থান থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।
ক্যাম্পাসের এতোদিন থেকে চর্চিত ভাই পলিটিক্স, সেলফি পলিটিক্স বন্ধ করার পক্ষে জোরালো আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আমরা ঠিক না হলে রাষ্ট্রীয় জায়গা থেকে কোনোকিছু সঠিক হবে এমন প্রত্যাশা করা কখনোই উচিত নয়।
শাবিপ্রবির বিশ্বজোড়া সুনামের ধারাবাহিকতায় শিক্ষাদীক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সিলেটের এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
শাবিতে পূর্বে একবার ঘুরতে আসার স্মৃতিচারণ করে সারজিস বলেন, আমি এর আগে আরেকবার সাস্টে এসেছিলাম। আজকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করতে সিলেট এসে ভেবেছিলাম সাস্টে একটু রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়াব। এখানকার সবুজ ক্যাম্পাস, অবকাঠামো সবকিছু আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু আজকে আর হেঁটে বেড়াতে পারলাম না আসলে।
ক্যাম্পাসের অলিতে-গলিতে একা একা কিংবা ভাই-বেরাদর নিয়ে হাঁটতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে সারজিস কোনো এক শুক্রবার ফজরের নামাজ পড়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে এবং একটি ছবি আপলোড দিয়ে সবাইকে জানান দেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
পরে উপস্থিত সাস্টিয়ান শিক্ষার্থীদের সাথে হাসিমুখে সেলফি তুলেন তিনি।