ওয়াল নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট প্রকট হচ্ছে। বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের “আদানি পাওয়ার” এর সঙ্গে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে টানাপড়েন। আদানি ৭ নভেম্বরের মধ্যে তাদের পাওনা পরিশোধের তাগিদ দিয়েছে। নয়তো তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করবে বলে জানিয়েছে।
বকেয়া আদায়ে ভারতের “আদানি পাওয়ার” আগেই তার একটি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশের জন্য নির্মাণ করা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুই ইউনিট থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশকে ১, ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি। গত বৃহস্পতিবার ৭০০ ইউনিটের একটি কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। সোমবার বিদ্যুৎ দিয়েছে ৭০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও জ্বালানি সংকটে আছে। ১, ১৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপাল ও এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ারের একটি করে ইউনিট কয়লার অভাবে বন্ধ রয়েছে। রামপালে ১, ২৩৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটির সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে। ১, ২২৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার এসএস পাওয়ারের গড় উৎপাদন ৬১২ মেগাওয়াট। গ্যাস সংকটে মোট ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি তেলের সংকটে ২৭টি ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলচালিত কেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নভেম্বরে কম চাহিদার সময়েও দেশে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ফলে দেশে লোডশেডিং বেড়ে প্রায় ১০০০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।
তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে, এখন পর্যন্ত তেমন লোডশেডিং নেই। যেহেতু এখন তাপমাত্রা কম, তাই চাহিদাও কম। তবে গরমের সময় কী হবে তা এখনই তারা বলতে পারছে না। তাদের হিসাবে সোমবার দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয় ১৩, ৫০০ মেগাওয়াট। আর উৎপাদন দেখানো হয়েছে ১৩, ৯৭৪ মেগাওয়াট। তবে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের হিসাব তাদের সঙ্গে মিলছে না।
পাওয়ার গ্রিডের হিসাবে সোমবার দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয়েছে ১২, ০৫০ মেগাওয়াট। আর উৎপাদন দেখানে হয়েছে ১১, ৯৪৭ মেগাওয়াট। এখানে ঘাটতি দেখানো হয়েছে ৯৮ মেগাওয়াট। আর এই উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে আদানি দিয়েছে ৭৩৩ মেগাওয়াট।
আরও আমদানি করা বিদ্যুৎ হলো ভেড়ামারার ৯০৫ মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরার ৫৮ মেগাওয়াট। মোট ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ হলো ১, ৬৯৬ মেগাওয়াট। দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া গেছে ১০, ২৫১ মেগাওয়াট। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে গ্যাস চালিত কেন্দ্রগুলো থেকে পাঁচ ৫, ৩৩৯ মেগাওয়াট, তরল জ্বালানি থেকে ১, ৬১৩, কয়লা ২, ৫৫০, জলবিদ্যুৎ ১৭৬ এবং সৌরবিদ্যুৎ ৫৭৩ মেগাওয়াট।
দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৪৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। সবগুলো কেন্দ্র মিলিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। তবে এর মধ্যে বেশকিছু কেন্দ্র মেরামতের জন্য বন্ধ আছে। আর জ্বালানির অভাবেও বন্ধ আছে বড় বড় কেন্দ্র।
পাওয়ার গ্রিড যে মাত্র ৯৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেখাচ্ছে, তা আসলে ঠিক নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ, তাদের হিসাবে ৫% সিস্টেম লস ধরলে ঘাটতি দাঁড়ায় প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট। তার চেয়েও বেশি ঘাটতি আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিদ্যুৎখাত বিশ্লেষক প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, “বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকলে সারাদেশে লোডশেডিং হচ্ছে কেন?” তার কথা, “লোডশেডিংয়ের যে হিসাব করা হয় তার মধ্যে অনেক ফাঁকি আছে। আসলে প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করা করা হয় না।”
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com