ওয়াল নিউজ ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪-কে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন নেতা তাদের কৌশলগত স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় তাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে তারা চিন্তাভাবনা করছেন।
যদিও বেশিরভাগ নেতা সরাসরি সমর্থন জানান দেননি, তাদের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে বোঝা যায় যে, তারা কোনদিকে ঝুঁকছেন। নিচে বিশ্বের কিছু প্রধান নেতাদের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
ভøাদিমির পুতিন (রাশিয়া) : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সম্ভবত ট্রাম্পের জয়কে সমর্থন করবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প রাশিয়ার জন্য তুলনামূলকভাবে নরম মনোভাবাপন্ন। এর ফলে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কমে যেতে পারে। পুতিনের কাছে ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করা সহজ মনে হয়, যা কামালা হ্যারিসের ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভব নয়।
শি জিনপিং (চীন) : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করেননি, তবে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, হ্যারিসের বিজয় তার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং আমেরিকা চীনের ওপর বিভিন্ন শুল্ক আরোপ করেছিল। হ্যারিস প্রশাসন সম্ভবত এই শুল্ক নীতিকে কঠোরভাবে অনুসরণ করবে না। যদিও অতীতে দুই দলের পক্ষেই চীন সম্পর্কিত কঠোর অবস্থান ছিল, তাই চীন উভয় প্রার্থীর ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (ইসরায়েল) : ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্ভবত ট্রাম্পের প্রতি ঝুঁকে আছেন। কারণ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইসরাইলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ভালো। নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া, বাইডেন প্রশাসন গাজা সংকটের মধ্যে ইসরাইলকে যথেষ্ট সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। তাই হ্যারিস নির্বাচিত হলেও এই নীতি চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি (ভারত) : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে চলছেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দলের সম্পর্ক বেশ শক্তিশালী। তবে ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মনোভাব ভারতের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। কমলা হ্যারিসের প্রশাসন ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে বাইডেনের সময়ে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর কারণে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান : দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া ও চীনের মতো হুমকির বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে হ্যারিসের বিজয় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিননীতি অব্যাহত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কিছুটা অস্থির ছিল, তাই হ্যারিস প্রশাসনের সম্ভাব্য ধারাবাহিক নীতি এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্সি যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। কারণ ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হলে তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে। চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধও অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে, কারণ চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।
ইউরোপ এবং ন্যাটো নেতারা : ইউরোপের বেশিরভাগ নেতা, বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ন্যাটো নিয়ে তার সন্দেহজনক মনোভাব এবং নীতির অস্থিরতা ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বিগ্ন করেছিল। হ্যারিস বাইডেনের মতই স্থায়ী সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবেশ এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যুতেও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ বাড়বে।
সারসংক্ষেপ : এখন বলা যায়, বিশ্বের অনেক নেতা সম্ভবত কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করতে পারেন। কারণ তিনি একটি স্থায়ী এবং পূর্বনির্ধারিত নীতি পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে পুতিন এবং নেতানিয়াহুর মতো নেতারা সম্ভবত ট্রাম্পের নীতির প্রতি ঝুঁকছেন, কারণ ট্রাম্প তাদের নির্দিষ্ট স্বার্থে আরো নমনীয় হতে পারেন। ৫ নভেম্বরের এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী অনেক বিষয়ের গতিপথ নির্ধারিত হবে।
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com