ইউরোপের দেশ পর্তুগালের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশটিতে বসবাসরত অভিবাসীরা। দেশটির রাজধানী লিসবনে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে জড়ো হন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শতাধিক অভিবাসী।
ওয়াল নিউজ ডেস্ক
অভিবাসীবান্ধব বলে পরিচিতি ছিল পর্তুগালের। কিন্তু এ বছরের মার্চে ক্ষমতায় আসা মধ্য-ডানপন্থী সরকার দেশটির অভিবাসন নীতি কঠোর করেছে। এ নীতির আওতায় পর্তুগালে অনিয়মিতভাবে আসা বিদেশিদের নিয়মিত হওয়ার পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
২০০৭ সাল থেকে ইউরোপের যেকোনো দেশে বৈধ ভিসা নিয়ে আসা ব্যক্তিদের কাজের আওতায় নিয়মিত হওয়ার সুযোগ দিয়ে আসছিল লিসবন। ২০১৮ সাল থেকে অনিয়মিতভাবে আসা অভিবাসীরাও সেই সুযোগ পাচ্ছিলেন। কিন্তু এ বছরের মার্চে দেশটির ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার তিন মাসের মধ্যেই এই সুযোগটি বন্ধ করে দেয়।
পর্তুগালের ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন এজেন্সির (আইমা) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পর্তুগালে ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
অভিবাসীদের বড় একটি অংশ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর নাগরিক। তারা মূলত কৃষি, মাছ চাষ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁর কাজে নিয়োজিত। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকার বিপুলসংখ্যক নাগরিক গত এক দশকে পর্তুগালে স্থায়ী হয়েছেন। ২০২৩ সালের শেষে দেশটিতে মোট অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ; যা জনসংখ্যার অন্তত ১০ শতাংশ।
পর্তুগালে অন্তত এক বছর ধরে কাজ করছেন এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অবদান রাখছিলেন, এমন অভিবাসীরা এতদিন নিয়মিত হতে পারতেন। যা মেনিফেস্টেশন অব ইন্টারেস্ট বা আগ্রহ প্রকাশ নামে পরিচিত। নতুন নীতিতে সেই বিধানটি বাদ দিয়েছেন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনিগ্রোর সরকার।
পার্লামেন্টে ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে সেই বিধান ফিরিয়ে আনার দাবি জানান বিক্ষুব্ধ অভিবাসীরা। বিক্ষোভ কর্মসূচির একজন আয়োজক এবং কাসা দে ব্রাজিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আনা পলা কস্তা বলেন, এরপর থেকে নিয়মিত হওয়ার আর কোনও সুযোগ থাকলো না অভিবাসীদের।
এমনকি রাষ্ট্রীয় সেবা পেতেও অভিবাসীদের নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান এই নারী অভিবাসী। পর্তুগালের মোট অভিবাসীদের ৩০ শতাংশ ব্রাজিলের নাগরিক জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বসবাসের অনুমতি বা রেসিডেন্স পারমিট পেতে কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না।
সরকারের প্ররোচনায় পর্তুগালে ক্রমশ অভিবাসনবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এই নারী বলেন, ডানপন্থীরা বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক এবং বর্ণবাদী বক্তব্য প্রচার করছে বলেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।
বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন অ্যাঙ্গোলা থেকে আসা এক নারী অভিবাসী। নিজের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা ইএফইকে তিনি বলেন, অভিবাসীরাও মানুষ। আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি, ঘুমাতে নয়। আমরা আমাদের পরিবারকে ছেড়ে এসেছি।
আরও অনেকের মতো ওই নারীর হাতেও একটি ফেস্টুন ছিল। সেখানে লেখা ছিল, দাসপ্রথার মতোই সংগ্রাম করছে অভিবাসী নারীরা। ১৫ বছর আগে পর্তুগালে এসেছিলেন তিনি। মেনিফেস্টেশন অব ইন্টারেস্ট বা আগ্রহ প্রকাশের মাধ্যমে দেশটিতে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু অপরের জন্য লড়াই করবেন বলেই যোগ দিয়েছেন বিক্ষোভ সমাবেশে।
ইক্যুয়াল রাইটস বা সমান অধিকারের দাবিতে হ্যান্ডমাইক হাতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। আর তার সাথে সুর মিলিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ডকুমেন্টস ফর অল বা সবার জন্য নথি।
ওইদিন রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম অ্যান্টেনা ওয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন পর্তুগালের স্টেট ফর প্রেসিডেন্সির সচিব রুই আর্মিন্দো ফ্রেইটাস। তিনি বলেন, অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিতকরণে মেনিফেস্টেশন অব ইন্টারেস্ট বা আগ্রহ প্রকাশের মতো বিষয়টি আর ফিরিয়ে আনা হবে না। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে অনিয়মিত পথে আসা সব মানুষের প্রতি অসম্মান করা হয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজক ও ইমিগ্র্যান্ট সলিডারিটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তিমোতেও মাসেদো ইএফইকে বলেন, নতুন নতুন এসব পদক্ষেপই মানুষকে মাফিয়াদের দিকে ঠেলে দেয় এবং মানবপাচারকে উসকে দেয়। এমন পদক্ষেপই আসলে সত্যিকারের অসম্মান।
• বিক্ষোভে বাংলাদেশিরা, দূতাবাস খোলার দাবি
কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীরাও। ভিসা, পারিবারিক পুনর্মিলনসহ দূতাবাস কেন্দ্রিক অন্যান্য কাজগুলোকে সহজতর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি পর্তুগিজ দূতাবাস খোলার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ছয় বছর আগে পর্তুগালে আসা বাংলাদেশি অভিবাসী মুনায়েম আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে আমাদের একটি পর্তুগিজ দূতাবাস প্রয়োজন। কারণ আমরা আমাদের পরিবারকে আনতে পারি না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দূতাবাস সম্পর্কিত কাজ করতে ভারতে যেতে হয়।
লিসবনে থাকা বাংলাদেশিদের তথ্য অনুযায়ী, পর্তুগালে অন্তত ৫০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন। ইনফোমাইগ্রেন্টস।