ওয়াল নিউজ ডেস্ক
আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে যে রিট হয়েছিল, তা থেকে সরে এসেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও হাসিবুল ইসলাম। মঙ্গলবার হাইকোর্টে এসব রিট প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী। একইসঙ্গে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে করা রিটটিও না চালানোর কথা জানানো হয়েছে।
রিটকারীদের আইনজীবী আহসানুল হাইকোর্টের বেঞ্চে রিট দুটি না চালানোর কথা বলেন। এরপর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীব সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদন দুটি উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ করে দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী ও আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব।
আদালতের আদেশের পর আইনজীবী আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, রিটকারীরা এটি চালাতে চান না। যার ফলে হাইকোর্ট রিট আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। রিটকারী বা মামলাকারী কখনো বলেন না কী কারণে তিনি মামলা তুলে নিচ্ছেন। সুতরাং এটি আমি বলতে পারব না, কী কারণে রিটটি তোলা হলো। তবে দেশের সার্বিক গণতন্ত্রের জন্য ও দেশের মঙ্গলের জন্য এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারা বলে আমরা ধারণা করছি।
গত সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও হাসিবুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন। একটি রিটে আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকা- চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। রিট আবেদনে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, বেআইনি প্রক্রিয়ায় অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের অভিযোগ আনা হয়েছিল দলগুলোর বিরুদ্ধে।
দলগুলো হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), গণতন্ত্রী দল, মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী (বড়ুয়া) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল। যদিও বাংলাদেশে মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী (বড়ুয়া) নামে কোনো রাজনৈতিক দল নেই।
এছাড়া, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে অপর একটি রিট করেন তিন রিটকারী। যেখানে বিগত তিন নির্বাচনের গেজেট বাতিল চাওয়া হয়। এছাড়া ওইসব নির্বাচনে এমপিদের সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করে তা প্রত্যাহারের নির্দেশনা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে ওইসব নির্বাচনের এমপিদের বিরুদ্ধে কেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হবে নাÑ সে বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছিল। হাইকোর্টে পৃথক রিট আবেদন দুটি করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম, আবুল হাসনাত (হাসনাত আবদুল্লাহ) ও হাসিবুল ইসলাম।
এদিকে ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ২৩ অক্টোবর রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেহেতু সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং এই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি ২৩ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এর পরপরই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল সরকার। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি পেশার মানুষ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।