• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্পের পাশে ইমামরা, কমলা-মিশেল একাট্টা

The Wall News.Com
প্রকাশিত অক্টোবর ২৯, ২০২৪
ট্রাম্পের পাশে ইমামরা, কমলা-মিশেল একাট্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


সপ্তাহখানেক পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শেষ সময়ে এসে দুই প্রার্থী ডেমোক্রেটিক কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক অঙ্গরাজ্য থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যে। তারই ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প-কমলা প্রচার চালিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগানে। সেখানে কমলার সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। আর সেখানে মুসলিম কম্যুনিটির সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যে শনিবারের নির্বাচনি সমাবেশে ভোটারদের কাছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পক্ষে আগেবঘন বক্তব্যে ভোট চেয়েছেন সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। ওদিকে মুসলিম ভোটারদের কাছে ভোট দেওয়ার আবেদন রেখেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মিশিগানে হ্যারিস ও ট্রাম্প যে ভোটারদের ভোট পেতে লড়ছেন, তাদের মধ্যে আরব বংশো™ূ¢ত আমেরিকান এবং মুসলিম ভোটাররা আছেন। তারা গাজায় ইসরাইলের বোমাবর্ষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ওদিকে অটোশিল্পের শ্রমিক ভোটার যারা আছেন, সেই শ্রমিক ইউনিয়ন সদস্যরা বৈদ্যুতিক যানবাহন কীভাবে অটোশিল্পকে বদলে দিতে পারে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের সদর দফতর মিশিগানের সবচেয়ে বড় নগরী ডেট্রয়েটে। আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গ্রহণের দিন হলেও মিশিগানসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে আগাম ভোট হয়ে গেছে।
ডেট্রয়েটের বাইরে এক জনসমাবেশে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মাত্রই স্থানীয় একদল ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ট্রাম্প যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, মুসলিম ভোটারদের সমর্থন তিনি পাওয়ার যোগ্য। কারণ তিনি লড়াইয়ের অবসান ঘটাবেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনবেন।
‘তারা এটুকুই চায়’ ডেট্রয়েট শহরতলি নোভির জনসমাবেশে বলেন ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধে ট্রাম্প ইসরাইলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। তবে তিনি সেখানে কীভাবে যুদ্ধ শেষ করবেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি। তাছাড়া ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সির মেয়াদে মুসলিম প্রধান দেশগুলো থেকে অভিবাসন নিষিদ্ধ করেছিলেন।
তারপরও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরাইলঘেঁষা নীতিতে অসন্তুষ্ট কিছু মুসলিম আমেরিকানের সমর্থন পাচ্ছেন ট্রাম্প। ডেট্রয়েটের ইসলামিক সেন্টারের এক ইমাম মঞ্চে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা মুসলিমদের ট্রাম্পের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজা নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট মিশিগানের মুসলিম নেতারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়াতেই তারা ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন।
ইমাম বেলাল আলজুহাইরি নামের এক মুসলিম নেতা বলেন, আমরা মুসলিম হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আছি। কারণ তিনি যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রসঙ্গে আলজুহাইরি যোগ করেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে রক্তপাত বন্ধ হওয়া উচিত এবং আমরা বিশ্বাস করি, ট্রাম্প এই পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন।
ওদিকে, প্রায় ১৩০ মাইল (২১০ কিলোমিটার) দূরে মিশিগানের দক্ষিণের নগর কালামাজুর সমাবেশে কমলা হ্যারিস গর্ভপাতের অধিকার, কর, স্বাস্থ্যসেবাসহ আরও কিছু বিষয়ে নিজের সঙ্গে ট্রাম্পের মতের পার্থক্য তুলে ধরেন। কমলার আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা। তিনি দুই প্রার্থীর বৈশিষ্ট্য এবং যোগ্যতার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে উপস্থিত দর্শকশ্রোতাদের উদ্দীপ্ত করে তোলেন।
মিশেল ওবামা নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, বিষয়টি কতটা জটিল, তা ট্রাম্প বোঝেননি। ফলে বারাক ওবামার আমলের ‘অ্যাফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ প্রত্যাহারে ট্রাম্প যে অঙ্গীকার করেছেন, তা গোটা নারী সমাজের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলবে বলে উল্লেখ করেন মিশেল।
এদিন ট্রাম্প মিশিগান থেকে পেনসিলভানিয়া যান। তিনি সেখানে পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে সমাবেশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, নভেম্বরের ৫ তারিখে বড় জয় দিয়ে আমাদের শেষ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে যে সাতটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্য নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে, মিশিগান তার একটি। সেখানে ৮৪ লাখ নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন। মিশিগানে ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেতে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিশিগানে ১১ হাজার ভোটে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে মাত্র ২ দশমিক ৮ পয়েন্টে জো বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। গত সপ্তাহের শুরুতে মিশিগানে শুরু হয় আগাম ভোট। শুক্রবার পর্যন্ত ২০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার ভোট দিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপ বলছে, ট্রাম্পের চেয়ে দশমিক ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস।