ওয়াল নিউজ ডেস্ক
গত কয়েকদিন ধরে যারাই হাট-বাজারে যাচ্ছেন তরি-তরকারি কিনতে এসে এক ধরনের ক্ষোভ আর হতাশা নিয়েই বাসায় ফিরছেন ক্রেতারা। গত এক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের তরকারির বাজারমূল্য অনেক বেড়েছে। যা ক্রেতা সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। দু একটি সবজির দাম সামান্য কমলেও এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি। বন্দরবাজারে যে সবজির দাম ৫০ টাকা সেটির দাম পাড়া মহল্লায় ২০/৩০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই বন্দরাবাজারের পোস্ট অফিসের সামনে ৩/৪ ধরনের সবজি কেটে মিলিয়ে ভাঘা ভাঘা করে বিক্রি হচ্ছে। দেশের মানুষ মাছের ভাঘা, মাংশের ভাঘা দেখেছে কিন্তু সবজির ভাগা এই প্রথম দেখা গেল। বাজার করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, পেশায় রিকশা ড্রাইভার। বয়স ৫০ হবে। এই ৫০ বছরে প্রথম তিনি সবজির ভাঘা কিনছেন ২ দিন ধরে। সবজির দাম এতই বেশি যে কমপক্ষে প্রতিদিন ১ কেজি সবজি কেনার মত শক্তি নিম্নআয়ের মানুষের এখন নেই।
সরেজমিন সিলেটের বাজার ঘুরেও এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতি রোধে মাঠে নেমেছে সিলেটের প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের ৯ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি মাঠে কাজ করছে। প্রতিদিন চলছে অভিযান, হচ্ছে বাজার মনিটরিং। এরপরও সুফল মিলছে না নিত্যপণ্যের দামে। উল্টো হালি প্রতি ২ টাকা কমে এবার ৬ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। কাঁচা মরিচের দাম এখনো ৪০০-৫০০ টাকার ঘরে। নতুন করে দাম বৃদ্ধির তালিকায় যোগ হয়েছে ময়দা, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও মুরগীর দাম।
বুধভার বাজার ঘুরে দেখা গেছে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি সবজি বাজারেই এখন উত্তাপ বেশি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সবজির দাম বাড়ছে। বিশেষ করে টমেটো ২৮০ টাকা, মরিচ ৪০০ টাকা, ধনিয়া পাতা ৫৫০ টাকা, গাজর ২২০ টাকা, ডিমের হালি ৬০ টাকা, লাউ ১০০ টাকা (প্রতি পিস) বেগুন ১৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, মূলা: ১০০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, শিম ৪০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৭০ টাকা, করোলা ১২০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, লাল শাক ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৯৫ টাকা, আলু ৫৫ টাকা। তবে কাঁচামরিচের দর সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
৮ অক্টোবর সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোবারক হোসেনকে আহ্বায়ক ও ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে সিলেটের জেলা প্রশাসন। উক্ত কমিটিতে- কৃষি বিপণণ কর্মকর্তা, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, জেলা খাদ্য কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ক্যাব সিলেটের প্রতিনিধি, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ সমন্বয়ককে যুক্ত করে ৯ জনকে সদস্য রাখা হয়। পরবর্তীতে উক্ত কমিটিতে জেলা তথ্য অফিসারকে কো-অপ্ট করে ১০ সদস্যে উন্নীত করা হয়। উক্ত কমিটির নেতৃত্বে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে নগরীর কালিঘাট, সোবহানীঘাট, বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বুধবার কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেই বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছে। আমাদের টিম প্রতিদিনই বাজারে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণণ কর্মকর্তা আবুল সালেহ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সিলেটের সবজি বাজার পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে। গত জুনের ৩ দফায় বন্যায় সিলেটের সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বন্যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকায় দাম কিছুটা বেশী রয়েছে। সিলেটের স্থানীয় সবজি বাজারে আসতে আরো ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তখন দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com