ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরের মাত্র কয়েক গজের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে আল-মদিনা জামে মসজিদ। মসজিদের মিনার আর মন্দিরের চূড়া দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র মধ্যে এক নালার এপার-ওপার। যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে দুই ধর্মের মানুষ যে যার ধর্ম পালন করে আসছেন এ উপজেলায়। পাশাপাশি মন্দির ও মসজিদ থাকায় এখানকার দুই ধর্মের মানুষই একে অন্যের ধর্ম সম্পর্কেও অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন। ফলে সম্প্রীতির শিক্ষা ছড়াচ্ছে ওই দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসবের নবমীর পূজা চলছে। আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে মন্দির এলাকা। বসেছে মেলাও। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা লাইন ধরে মন্দিরে আসছেন। ওই সময় যোহরের আজান হওয়ায় মুসল্লিরা নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন। নামাজের সময় বন্ধ রাখা হয় মন্দিরের মাইকসহ বাদ্যযন্ত্র। দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এক সঙ্গে প্রায় ৫০ ফুটের ব্যবধানে সহাবস্থানে রয়েছে। মসজিদ ও মন্দিরে দেয়াল থাকলেও দুর্গোৎসবে মন্দিরের অংশে অতিরিক্ত পর্দা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়ায় (উপজেলা কেন্দ্রীয় মন্দির) হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি পালন করে আসছেন। পাশেই গত ৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জুনেদ মিয়ার অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় আল-মদিনা জামে মসজিদ। এরপর থেকে সম্প্রীতির বন্ধনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আসছে ওই ধর্মীয় দুই প্রতিষ্ঠান। দেশব্যাপী অনেক সাম্প্রদায়িক উসকানি ঘটলেও এর কোনো প্রভাব এখনও পড়েনি এ উপজেলায়।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যালঘু বলা হলেও আমরা কিন্তু কখনোই তাদেরকে সেরকম দেখি না। আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখে মিলে-মিশে থাকি। আমাদের ঈদে তাদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের ধর্মীয় উৎসবেও আমাদেরকে নিমন্ত্রণ করা হয়। এটি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ফলে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির থাকায় কোনো সমস্যাও নেই।
আল মদিনা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ আজিজুর রহমান বলেন, পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দির স্থাপিত হলেও আমরা আমাদের ধর্ম পালন করছি, তারা তাদের ধর্ম পালন করছেন। আজান ও নামাজের সময় পূজার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া (কেন্দ্রীয় মন্দির) পূজা কমিটির সভাপতি বিভাষ দে বলেন, এ মন্দিরে স্থাপনের নির্দিষ্ট তারিখ আজও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে এ মন্দির স্থাপিত হয়েছিল। এখানে দুর্গাপূজাসহ সব ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি থাকায় কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মুসলমানদের নামাজের সময় আমাদের অনুষ্ঠান আমরা বন্ধ রাখি। নামাজ শেষ হলে আবার অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে করে কারো কোনো সমস্যা হয় না।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, এ উপজেলায় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। এবার জগন্নাথপুরে ৪১টি মণ্ডপে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করা হয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com