ওয়াল নিউজ ডেস্ক
নতুন দিন, ভিন্ন প্রতিপক্ষ; কিন্তু বাংলাদেশের গল্পটা সেই একইরকম। আসরজুড়ে যা দেখা গেল, শেষ ম্যাচেও সেই চেনা দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। আরেকবার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বড় হলো না পুঁজি। বোলাররাও পারলেন না খুব একটা লড়াই করতে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষটাও হলো তাই বিবর্ণ। নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
দুবাইয়ে শনিবার পুরো ২০ ওভার খেলে স্রেফ ৩ উইকেট হারালেও বাংলাদেশ করতে পারে কেবল ১০৬ রান। গোটা ইনিংসে বাউন্ডারি মোটে ৮টি (৭ চার, এক ছক্কা)। ৪৩ বলে ৪টি চারে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন সোবহানা মোস্তারি। অধিনায়ক নিগার সুলতানা ৩৮ বলে খেলে অপরাজিত রয়ে যান ৩২ রানে। অল্প পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের বোলাররা পারেননি লড়াই জমাতে। দক্ষিণ আফ্রিকা লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ১৬ বল হাতে রেখে। ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক লরা উলভার্টকে দ্রুত ফেরানো গেলেও, বাংলাদেশ ক্যাচ ছাড়ে অন্তত তিনটি, রান আউটের সুযোগ হারায় একাধিকবার।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই দিলারা আক্তারকে হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ওভারে তারা তুলতে পারে মাত্র ১০ রান, নেই কোনো বাউন্ডারি! অস্বস্তিময় শুরু আর একবার জীবন পেয়ে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন সাথি রানি। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি, স্লগ সুইপ করে আনেকা বশের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন তিনি, ১৯ রান করতে খেলেন ৩০ বল। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৪৩।
সোবহানা ও নিগারের জুটি এগিয়ে নেয় দলকে। তবে রানের গতিতে দম দিতে পারেননি কেউ। ৪৫ রানের জুটিতে দুজন খেলেন ৫৬ বল। অষ্টাদশ ওভারে সোবহানার বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। শেষ ২ ওভারে ২৩ রান নিয়ে কোনোমতে একশ ছাড়াতে পারে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে দ্বিতীয় ওভারে নাহিদা আক্তারের বলে উলভার্টের ক্যাচ ফেলেন সোবহানা। এর মূল্য যদিও খুব একটা দিতে হয়নি। পরের ওভারে ফাহিমা খাতুনের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে স্টাম্পড হয়ে বিদায় নেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক।
অষ্টম ওভারে আরেক ওপেনার তাজমিন ব্রিটসের ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন ফাহিমা। তখন ২১ রানে খেলছিলেন ব্রিটস। দ্বিতীয় উইকেটে বশের সঙ্গে ৫৪ বলে ৫৩ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন তিনি।
বশকে (২৫ বলে ২৫) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ফাহিমা। ফিফটির পথে থাকা ব্রিটসকে বোল্ড করে দেন রিতু মনি। ৪১ বলে ৫টি চারে ৪২ রান করেন ৩৩ বছর বয়সী ওপেনার। ক্লোয়ে ট্রায়নকে নিয়ে বাকিটা সারেন মারিজান ক্যাপ।
আসরে চার ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটিং হয়েছে খুবই বিবর্ণ। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে ১১৯ রান করলেও, বোলারদের নৈপুণ্যে বিশ্বকাপে ১০ বছর পর জয়ের দেখা পায় তারা। পরের ম্যাচে বোলাররা দারুণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে বেঁধে রাখে ১১৮ রানে, সম্ভাবনা জাগে আরেকটি জয়ের, কিন্তু রান তাড়ায় পুরো ২০ ওভার খেলে বাংলাদেশ করতে পারে ৯৭।
আরেক শক্ত প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের পুঁজি গড়ে ৮ উইকেটে হারে নিগারের দল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় সঙ্গী হলো বড় হার।
আর এই জয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে সেমি-ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে ভালোভাবেই রইল দক্ষিণ আফ্রিকা। চার ম্যাচে তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০৬/৩ (দিলারা ০, সাথি ১৯, সোবহানা ৩৮, নিগার ৩২*, স্বর্ণা ৪*; ক্যাপ ৪-০-১০-১, খাকা ৪-১-২৪-০, ডি ক্লার্ক ৩-০-২৯-০, ডের্কসেন ১-০-৭-১, ট্রায়ন ৩-০-১৯-০, এমলাবা ৪-০-১১-১, লিস ১-০-৪-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৭.২ ওভারে ১০৭/৩ (উলভার্ট ৭, ব্রিটস ৪২, বশ ২৫, ক্যাপ ১৩*, ট্রায়ন ১৪*; মারুফা ১-০-৭-০, নাহিদা ৪-০-২৩-০, ফাহিমা ৪-০-১৯-২, রাবেয়া ৩.২-০-২৩-০, রিতু ৩-০-২২-১, স্বর্ণা ২-০-৯-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: তাজমিন ব্রিটস