ওয়াল নিউজ ডেস্ক
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি নিয়ম না মেনে নিজেদের ইচ্ছামতো স্কুলে যাওয়ায় প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রবিবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই ১৯ টি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ইচ্ছামতো স্কুলে যেতেন, ক্লাস শুরু না করে অফিসে খোশগল্পে মেতে উঠতেন। এমনকি স্কুলে নিজেদের সুবিধামতো গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেন তারা। তাদের এমন খামখেয়ালিপনায় শিক্ষার্থীরাও স্কুলে দেরিতে আসছে এবং স্কুলে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রকৃত পাঠদান। গত রবিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে এমন সচিত্র দেখতে পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৌরভ গোস্বামী ও একলাছ মিয়া। এ সময় তারা উপজেলার ২০টি স্কুল পরিদর্শন করে ১৯ টি স্কুলে শিক্ষক অনুপস্থিতির সত্যতা পান। এ ব্যাপারে আগামী ১০ ও ১৪ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তলবকৃত এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আমতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছদরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গৌরীশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মীরশংকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ পাবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাবদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুধপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেওলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গজভাগ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেলিবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ বিজলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে পৌর শহরের আমীর ছলফু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজেলার ৮৬টি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে ক্লাস্টার মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৌরভ গোস্বামী ও মো. একলাছ মিয়া। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন উপস্থিত সব প্রধান শিক্ষককে সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়ার কারণে সতর্ক করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ায় মোট ১৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ৯টায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা ১০টার আগে বিদ্যালয়েই আসেন না- এমন অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন থেকে। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর গত রবিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করা হয়। তন্মধ্যে কাদিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত আমতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন। দেখতে পান, আমতৈল প্রাইমারি স্কুলে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে তিনজন শিক্ষক উপস্থিত, প্রধান শিক্ষকসহ আরেকজন শিক্ষক শাহানা পারভীন অনুপস্থিত, তখনো ক্লাস শুরু হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখায়ের হোসেন ভূঁঞা বলেন, গত রবিবার উপজেলার ২০টি স্কুল পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ১৯ টি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সময়মতো উপস্থিত হন না- এমন অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সরকারি সময়সূচি নির্ধারণ করা আছে। যেসব শিক্ষকরা সময়মতো স্কুলে উপস্থিত হননি তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিলে একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়া ক্লাস্টার মিটিংয়ে ৮৬টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য উপজেলার সব শিক্ষকের মাঝে শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে প্রশাসন।