নিজস্ব প্রতিবেদক
সাধারণ এক কনস্টেবল থেকে রাতারাতি পুলিশ পরিদর্শক হয়ে যান মানিকুল ইসলাম৷ রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার শ্রীমন্তপুর গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম নেওয়া এই পুলিশ সদস্য ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিলেট রেঞ্জের বিভিন্ন থানা, এসপি কার্যালয় এবং হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হেন অপকর্ম নাই যা করেননি।
তিনি পুলিশী পোশাকের অপব্যবহার করে জঘন্যতম অপরাধ কর্মে নিজেকে জড়িয়েছিলেন৷ নারীর সম্ভ্রমহানী, জালিয়াতি, মাদক চোরাচালান, নাম প্রতারণাপূর্বক বহুবিবাহ, ব্ল্যাকমেইলিংসহ ক্ষমতার দাপটে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের সম্ভ্রমহানির দিস্তা দিস্তা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, পুলিশ পরিদর্শক পদোন্নতিপ্রাপ্তির পর তিনি হবিগঞ্জ এসপি কার্যালয়ে ওসি (ডিবি) হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন নিরীহ ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারের হুমকি দেখিয়ে হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিরাজ মিয়া ও হবিগঞ্জ সদর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুকিতের পরিবারকে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ করে দেন। বিপরীতে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান।
রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান পুলিশে চাকরির সুবাদে নিজ গ্রামে বিলাসবহুল দালান তৈরি, একাধিক আমবাগানের মালিকানা, গোদাগাড়ী থানার সামনে ক্রয়কৃত জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, রাজধানী ঢাকাতে দোকান ও ফ্ল্যাট খরিদসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হোন৷
তার বিরুদ্ধে সিলেট রেঞ্জে অবস্থানকালীন সময়ে নারী সম্ভ্রমহানীর অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী নারীরা বিচার প্রার্থী হলেও ফ্যাসিবাদি সরকারের আমলে তারা কোনো সুবিচার পাননি।
উল্লেখ্য, পুলিশ কর্মকর্তা মানিকুলের উল্লিখিত অপকর্ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সিরিজ আকারে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পুলিশ বিভাগের অসৎ, দুর্নীতিবাজ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে অবৈধ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বরখাস্ত তো করেননি উপরন্তু পদোন্নতি দিয়েছেন।
মানিকুলের এহেন দৌরাত্মের বিরুদ্ধে তাকে পুলিশের চাকরি থেকে স্থায়ী অপসারণে দাবিতে গত ২৬ আগস্ট সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় তাকে বরখাস্ত করণের দাবিতে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
ভুক্তভোগীদের দাবি, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরশাসকের পতনের পর সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে মানিকুলের মত অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও দুশ্চরিত্র পুলিশ সদস্যকে পুলিশ বিভাগ হইতে অপসারণ করতে হবে।
মানিকুলের মত অসৎ কর্মকর্তারা নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার ফলে পুলিশ বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা দিন দিন বাড়ছে। কেবল তাই নয়, পুলিশের ভাবমূর্তি ও ক্ষুন্ন হচ্ছে নিঃসন্দেহে।
আইনের পোষাক পরে যে মানিকুল আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের সাথে জড়িত থেকে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।