ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের হাওরকে বলা হয় শষ্যভান্ডার। এসব হাওর থেকেই প্রতি বছর উৎপাদন হয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ধান। হাওর পাড়ের মানুষ সব সময় বন্যা আতংকের মধ্যে দিন কাটান। ২০১০ সাল ও ২০১৭ সালে হাওরডুবির পর ছোট বন্যার সম্মুখীন হয়েও বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় কৃষকের সোনার ফসল।
এ জন্য ধান যাতে আগাম বন্যায় তলিয়ে না যায় সেই লক্ষ্যে শত কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ফসল রক্ষা বাঁধ। এ সকল বাঁধ মজবুত করতে হাওর পাড়ে ফেলা হয় মাটি। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী চক্র প্রতি বছরই ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে মৎস্য আহরণ করে। এতে করে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমনি একটি বাঁধ রয়েছে সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের নিয়ামতপুরের পাশে রক্তি নদীর পাড়ে। বাঁধটি কেটে মৎস্য আহরণ করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। বুড়িডাক্কুয়া হওরের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রায় ১৫০ ফুট কেটে মৎস্য আহরণ করা হচ্ছে। আর এতে করে ক্রমশই এই বাঁধটি দুর্বল হচ্ছে। একই সাথে হাওরের পানি নদীর সাথে মিশে যাওয়ার ফলে হাওরে পলি জমে ধানি জমি নষ্ট হচ্ছে।
তিনটি উপজেলার শেষ সীমা নিয়ে গঠিত হাওরটিতে অনেকগুলো গ্রামের কৃষকের জমি রয়েছে। কৃষকরা বাঁধ কাটা নিয়ে বাধা দিলেও নিয়ামতপুর গ্রামের প্রভাবশালী চক্রের প্রধান মুজিব মিয়ার নেতৃত্বে রাতের আধারে বাঁধ কেটে দেয়। এরপর থেকে তারা বাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে বাঁশ-চাটাই দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জোরপূর্বক মাছ আহরণ করছে। এ কারণে ফসল রক্ষা বাঁধের যেভাবে ক্ষতি হচ্ছে একইভাবে ধানি জমিও চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বাঁধ কাটার ফলে দিনদিন এটি দুর্বল হয়ে পড়ছে পানির চাপে। তাই আগামী বছর এই বাঁধ মেরামতে বাড়বে সরকারের ব্যয়।
মুজিব হোসেন এবং জুয়েল মিয়া জোরপূর্বক মাছ ধরার ফলে পার্শবর্তী গ্রামের গরিব খেটে খাওয়া মানুষ হাওরে মাছ ধরতে পারেন না। কারণ সব মাছ পানির বেগে ঐ বাঁধ কাটার স্থানে চলে যায়। এ সব নিয়ে গ্রামের লোকজনের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে উপজেলা প্রশাসন সেটি সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠায়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
ফসলরক্ষা বাঁধ কাটার ব্যাপারে হাওরের জমির মালিক কৃষকদের পক্ষে অভিযোগ দেয়ায় চেয়ারম্যান ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মুজিব হোসেনের পক্ষ নিয়ে গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা আয়না মিয়া চেয়ারম্যান ফারুককে প্রাণনাশের হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
হুমকি দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে আয়না মিয়া বলেন, বন্যায় বাঁধ ভাঙছে। বাঁধ কাটার প্রশ্নই ওঠে না। এগুলো মিথ্যা কথা। সে আমাকে গালিগালাজ করেছে। আমিও তাকে গালিগালাজ করেছি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, আমরা অবশ্যই এ ফসল রক্ষা বাঁধের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিব। আমরা সব সময় কৃষকের অধিকার নিয়ে কাজ করি। এভাবে বাঁধ কাটা ঘটনা ঘটলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনব, যাতে করে দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) সুকান্ত সাহা বলেন, প্রয়োজনীয় তথ্যাদি উপস্থাপন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com