ওয়াল নিউজ ডেস্ক
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামী মাসের সিরিজ দিয়ে তিনি ইতি টানবেন টেস্ট ক্যারিয়ারের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরবময় এক অধ্যায় তাই এখন শেষের কাছে।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের টেস্টের আগের দিন কানপুরে এই ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার।
তবে ওয়ানডে ক্রিকেট তিনি এখনই ছাড়ছেন না। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত এই সংস্করণে খেলতে চান ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাঠে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সাকিবের খেলা নিয়ে অবশ্য কিছু জটিলতা আছে। দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর মাসখানেক আগে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয় রাজধানীর আদাবর থানায়। গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যার ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় ১৫৬ জন আসামির তালিকায় ২৮ নম্বরে আছে সাকিবের নাম।
মামলাটি হওয়ার সময় সাকিব ছিলেন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে। ওই সফরের পর তিনি আর দেশে ফেরেনি। পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ডে যান তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে। সেখান থেকেই সরাসরি চলে যান ভারত সফরে।
হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরা ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে ফেরা নিয়ে সাকিবের নিজেরও কিছুটা শঙ্কা আছে। দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।
“এখন পর্যন্ত আমি তো অ্যাভেইলঅ্যাবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।’
“ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দর ভাবে আয়োজন করা যায়।”
সাকিব বলেছেন, দেশে ফেরা ও সিরিজ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে নির্বিঘ্নে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা তিনি চেয়েছেন।
“আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোন সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাঁরা দেখছেন। তাঁরা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।”
সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে মাগুরা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। সরকার পতনের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ার পর পাকিস্তান থেক তাকে দেশে ফেরাতে আইনী নোটিস দেন এক আইনজীবী। তবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্পদের অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি পাঠান এক আইনজীবী। সবশেষ তিনি আলোচনায় উঠে আসেন শেয়ারবাজার কারসাজির দায়ে ৫০ লাখ টাকা পরিমানা হওয়ায়।
মাঠের বাইরে দুঃসময়ের মধ্যে থাকা সাকিব মাঠের ভেতরও হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে। পাকিস্তান সফরে বোলিংয়ে মোটামুটি পারফর্ম করতে পারলেও ব্যাট হাতে ছিলেন সাদামাটা। ভারতের প্রথম টেস্টে ব্যাট হাতে একটু লড়াই করতে পারলেও বোলিংয়ে ছিলেন একদমই ধারহীন। সব মিলিয়ে তার পারফম্যান্স সেরার ধারেকাছ নেই অনেক দিন ধরেই। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে চোখের সমস্যাও তাকে প্রবলভাবে ভোগাচ্ছে, যা বাজেভাবে প্রভাব ফেলছে তার ব্যাটিংয়ে।
২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষিক্ত সাকিব এই সংস্করণে এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ৭০ টেস্ট। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অসংখ্য রেকর্ড আর অর্জন তার সঙ্গী। দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে তিনি অবিসংবাদিত। বিশ্ব ক্রিকেটের পরিমণ্ডলেও তার রেকর্ডের কমতি নেই। ২০১১ সালে প্রথমবার আইসিসি টেস্ট অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠার পর তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাখেন এই জায়গা।
তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ হলো ১২৯ ম্যাচে। এখানেও লম্বা সময় ছিলেন অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে।
১৯ টেস্ট ও ৩৯ টি-টোয়েন্টিতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশকে।