• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

স্মৃতিকথা

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪
স্মৃতিকথা

তাওহীদুর রহমান শাহ্


এক এক করে জীবনের তিন দশকের বসন্ত হয়ে গেল গত!

কত উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না
প্রাণান্ত রোমাঞ্চ, একগেয়ে আনন্দের স্বর্গীয় সময়-
সব অজানা পথ পাড়ি দিল শূন্যের অভিমুখে!

সেইসব স্মৃতি কড়া নাড়ে আচমকা মাঝরাতে,
তাই আমি একটু পিছনে ফিরে যেতে চাই সুপ্রিয় পাঠক

কয়েকটা দুরন্ত বালক উন্মত্ত মেঘ মাথায় রেখে
রোজকার মত চলে যাচ্ছে ফুটবল হাতে,
খেলা শুরু হতে বিলম্ব থাকলেও ঝুম বৃষ্টি অবধারিত
কেউ একজন বলে উঠল, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়,  আড়ালে তার সূর্য হাসে’
তাই বলে কি খেলা গড়ানোর শঙ্কা কেটে যায়?

বৃষ্টিও তো থেমে থাকেনি
প্রবাদবাক্য ভুল প্রমাণিত করতে সেদিন যে ঝড় বয়েছিল
তুফানের তাণ্ডবে গাছের সকল বরই বৃন্তচ্যুত হয়েছিল।

আরেকদিন বড়দের একজন বলে উঠল-
ছোট কুলা, বড় কুলা পাড় হয়ে ওই কুইগাঙের ওখানে ইয়া বড় সাপ ধরা পড়েছে!
আর হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত তাকে অনুসরণ করতে করতে সোজা গন্তব্যে পৌঁছলাম জনদশেক,
সর্পদর্শন না হলেও জীবনের প্রথম শালুক খাওয়া,
জরাজীর্ণ, শ্বাপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দেবার সে কী সময়!

মাঠে খেলা চলছে,
তুমুল উত্তেজনা চারপাশে
কেউ একজনের ভেতর উৎকণ্ঠা-
কেন তাকে খেলায় নিচ্ছেনা ছোকড়াদের সর্দারজি?

হাতে বদনা, ছিপ আর কচুপাতায় কতেক জির নিয়ে
ওইতো খালে চ্যাং, উফল, পুঁটি ধরতে যাচ্ছে ছেলের দল।

বদনায় জিইয়ে রাখা মাছগুলো গুনতে মানা,
টপাটপ ছিক মেরে ধরে ফেলা বারোখাউরি মাছ নিয়ে
কাঠফাটা রোদ মাথায় করে তাড়া নিয়ে ফিরছে ঘরে,
হয়তো দুপুরে খাবার সম্বল গুটিকতেক মাছ!

সুবোধ ৫ টাকা দামের নলি নাটাইয়ে পেঁচিয়ে নিয়েছে
সারা সকালজুড়ে বানানো ঘুড়িটা তার  আকাশে উড়ছে উন্মত্ততায়!

চাচাত অত্যুৎসাহী ছোটভাইটি ঘুড়ির টান দেখে
দৌড়ে দোকানে এসে যে পাঁচটাকা দিয়ে আরেকটা সূতো কিনে নিয়ে এল
সেই টাকাটা দিয়ে তো একটা খাতাও কেনা যেত!

তক্তার ব্যাট, মারুতি কিংবা সুপারস্টার বল
পাড়ার সেরা কয়েকজন মিলে গঠিত পোক্ত দল
একটা লাল টেপ দিয়ে তারিকি খেলা
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
২ বলে আটরান লাগে
হয়তো নো-বলে আউট দেওয়া নিয়ে তুমুল বিবাদ!
ম্যাচশেষে জয় কিংবা পরাজয়,
শেষমেশ সন্ধ্যা নামা।

সিগারেট কি’বা দেশলাইয়ের মোড়ক অথবা
কাঁঠালপাতা দিয়ে চলত তাসের মত্ততা
চাটনির আঁঠা দিয়ে ফর বানানো,
ফর পেতে পাখি শিকারের দস্যিতা
এইতো মনে হয় গতকাল, যদিও গত হল বহুকাল!

চালের বস্তার সুতায় চুম্বক বেঁধে লোহা সংগ্রহ
অতঃপর লোহালক্কড় বিক্রি করে কুড়িমত টাকা প্রাপ্তি,
এক পট চালের বদলে তিনটে আইসক্রিম কেনা
ঘণ্টা বাজিয়ে যখন হাঁকাচ্ছে চিরচেনা আইসক্রিমওয়ালা
‘হায়রে মজার আইসক্রিম, ফুড়াই গেলে ফাইবায়নি’!

মচকে যাওয়া পা নিয়েও পরদিন মাঠে যাওয়া
প্রতিশোধের ক্ষোভে অন্য কাউকে ল্যাং মেরে বসা-
এইসব রোমাঞ্চিত সময় এখন নেই
সেই কাঁদায় গড়াগড়ি করা বিকেল এখন বড়ই কৃপণ।
এখন আর কেউ কাঁদামাখা হয়ে সন্ধ্যার মুখোমুখি দাঁড়ায় না!

হারানো দিনগুলো ফিরে আসে না
যেমন ফিরে আসে না, শেষবার হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কোনো মুখ!

ধৈর্যশীল পাঠক প্রিয়তমাসু-
আপনাকে কাঁদাবো বলে লেখিনি
তবুও কাঁদছেন? কাঁদবেন না।
জানেন কি, আপনিও ধীরেধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছেন?
তেল ফুরালেই আপনার নিভে যাওয়া।