• ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৮২

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৮২

ওয়াল নিউজ ডেস্ক
দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলায় সোমবার ১৮২ জন নিহত ও ৭২৭ জন আহত হয়েছে। লেবানিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আন্ত সীমান্ত হামলা এটি।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ওপর এক নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। এতে এই অঞ্চলের চারপাশে থাকা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ক্রমবর্ধমান এ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে হিজবুল্লাহ অন্যতম।
ইসরায়েল সোমবার জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর তিন শতাধিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা উত্তর ইসরায়েলে তিনটি স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। লেবানিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের সীমান্তে প্রায় এক বছর ধরে চলা সহিংসতার মধ্যে এদিনের হামলা সবচেয়ে মারাত্মক।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আজ সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ও গ্রামে ইসরায়েলের হামলায় ১৮২ জন নিহত এবং ৭২৭ জন আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে শিশু, নারী ও প্যারামেডিকরা রয়েছে।
এদিকে বিশ্ব শক্তিগুলো ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের প্রান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দু গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের দক্ষিণ ফ্রন্ট থেকে হঠাৎ করে লেবাননের উত্তর সীমান্তে স্থানান্তরিত হয়েছে।
দক্ষিণ লেবাননের জওতার গ্রামের ৬০ বছর বয়সী গৃহিণী ওয়াফা ইসমাইল বলেন, ‘আমরা বোমাবর্ষণের মধ্যে ঘুমাই ও জেগে উঠি…এটাই আমাদের জীবনের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।’
অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি লেবাননের জনগণকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু এড়াতে বলেছেন। কারণ হামলা ভবিষ্যতে ও চলতে থাকবে। হাগারি বলেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ‘লেবাননের সর্বত্র বিস্তৃত সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলির বিরুদ্ধে (আরো) ব্যাপক ও সুনির্দিষ্ট হামলা চালাবে।’ পাশাপাশি তিনি বেসামরিকদের ‘নিজের নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে’ বলেছেন।
ইরান সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা তাদের ফিলিস্তিনি মিত্র হামাসকে সমর্থনে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াই করছে। বিভক্ত লেবাননে, দেশের দক্ষিণ ও পূর্বের বড় অংশ এবং রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠগুলো হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে এই দল ঐতিহাসিকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তার শিয়া মুসলিমদের সমর্থন ভিত্তির জন্য বিভিন্ন পরিষেবা তৈরি করেছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস সোমবার দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা নিশ্চিত করছি, এই ব্যাপক বর্বর আগ্রাসন একটি যুদ্ধাপরাধ। আবারও নিশ্চিত করছি, আমাদের সংহতি…হিজবুল্লাহ ও ভ্রাতৃপ্রতিম লেবাননিজ ভাইদের সঙ্গে রয়েছে।’
এ ছাড়া ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মারাত্মক এ হামলার পর ইসরায়েলকে ‘বিপজ্জনক পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি ইসরায়েলি হামলাকে ‘উন্মাদনা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ‘জায়নবাদীদের নতুন অভিযানের বিপজ্জনক পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
কানানি আরো বলেছেন, ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলের ‘অপরাধ’ ও তাদের ‘লেবাননে সম্প্রসারণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য একটি গুরুতর হুমকির স্পষ্ট উদাহরণ’। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কঠোর সমালোচনা করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ‘এই অপরাধ বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার’ আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ এদিন লেবাননে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে ‘অন্য স্তরে’ নিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের অধিকার অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘লেবাননে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা যোগাযোগ ডিভাইসে, পেজারগুলোতে যে হামলাগুলো দেখেছি, তারপর উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি রকেট হামলা…এটি একটি প্রকৃত যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সব সময় যে বিষয়ে সতর্ক করে আসছি, সংঘাতের আঞ্চলিক বিস্তার, তাতে দেখা যাচ্ছে, সংঘাতের পক্ষগুলোর ক্রিয়াকলাপ ও বক্তব্যÑউভয়ই সংঘাতকে অন্য স্তরে নিয়ে যাচ্ছে।’