ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব দিতে এবার সর্বশেষ সময়সীমা ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এ বছর আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। তবে আগামী বছর থেকে প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে হবে। রবিবার সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব জমাদান নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীকে ‘সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি-১৯৭৯’ এর আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে। এবার যেহেতু আমরা নতুন বছর পাইনি, ভাঙা বছর পেয়েছি, এ জন্য এ বছরেরটা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে।
সিনিয়র সচিব বলেন, সম্পদের হিসাব সিলগালা করা খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সম্পদ বিবরণীতে ভুল তথ্য কিংবা গোপন এমন কোনো তথ্য থাকে যা মিসলিড করে, এটি হবে ১৯৭৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অনুশাসন মানা সব কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারিভাবে কর্মচারী বলা হয়।
মোখলেস উর রহমান জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত নির্ধারিত ছকে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
সিনিয়র সচিব বলেন, বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়। সম্পদ বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এক্ষেত্রে ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ প্রযোজ্য হবে না।
তিনি বলেন, সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে কী হবেÑ অনেকে তা জানতে চেয়েছিলেন। জমা না দিলে অনেক কিছু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য প্রদান কিংবা তথ্য গোপন করা হলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব না দিলে খবর আছে : জনপ্রশাসন সচিব
‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮’ এর ৪(৫)(গ) উপবিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর জন্য লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড আরোপের বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিরস্কার, পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, দায়িত্বে অবহেলার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ আদায়, বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হচ্ছে লঘুদণ্ড। অন্যদিকে গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা।
এর আগে ১ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, সকল সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। তারও আগে গত ২৪ আগস্ট স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব বিবরণী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের স্মারক মূলে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের (স্বামী/স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) দেশে ও বিদেশে অবস্থিত সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সে লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের (স্বামী/স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) দেশে ও বিদেশের সম্পদের হিসাব বিবরণী আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংযুক্ত ফরম অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে দাখিল করার জন্য প্রধান বিচারপতি অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের (স্বামী/স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) দেশে ও বিদেশের সম্পদের হিসাব বিবরণী আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংযুক্ত ফরম অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে দাখিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হলো।
সরকারি কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর পর পর সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান থাকলেও তা মানেন না অনেকে। সরকারি চাকরির আচরণ বিধিমালার তোয়াক্কাই করেন না তারা। আর যাদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার কথা, সংশ্লিষ্ট সেই কর্তৃপক্ষও এক্ষেত্রে বেশ উদাসীন। এ বিষয়ে সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি ক্ষুণœ হলেও নেওয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা। এ কারণে সম্পদের হিসাব দিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম অনীহা।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে সরকারি কর্মচারীদের পাঁচ বছর পর পর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এ এটি যুক্ত করা হয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব নিজ দপ্তরে জমা দিতে হবে।
তবে, ২০০২ সালে ওই বিধিমালা সংশোধন করে এক বছরের পরিবর্তে প্রতি পাঁচ বছর পর পর কর্মচারীদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। কিন্তু চার দশক ধরে এ নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি। উল্টো সংশোধিত বিধিমালায় সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব ইস্যুতে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।