ওয়াল নিউজ ডেস্ক
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামীকাল সোমবার নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী, নিরাপত্তা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মী মিলিয়ে মোট ৫৭ জনের একটি বহর যাচ্ছে নিউইয়র্কে।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবশ্যই ব্যয় সংকোচন করতে হবে। অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় কোনো খরচ করা যাবে না। কিছু বিষয় আছে আমরা চাইলেও সংকোচন করতে পারি না। এর মধ্যে নিরাপত্তা সবার উপরে। সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা হবে ৫৭ জন। তার মধ্যে বড় একটি অংশ নিরাপত্তা ও প্রেস। আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি, সেখানে যাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কেবল তারাই যাচ্ছেন।
এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়া বহরের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, আগে যারা বড় বহর নিয়ে যেতেন, তারা কেন সেটা করতেন তা আমি বলতে পারব না। হয়ত এটার কোনো অর্জন ছিল, কিন্তু আমার জানা নেই। স্বাভাবিক সময়ে সংখ্যা ছিল ৩৪৪, ৩৩৫; এটা ছিল ৭৩ ও ৭৪তম অধিবেশনে। কোভিডের কারণে ৭৫তম হয়েছে ভার্চুয়ালি। কোভিডের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৭৬তম অধিবেশনে ১০৮, ৭৭তম অধিবেশনে ১৩৮ জন গিয়েছিলেন। কোভিড পরবর্তী সময় যখন ব্যয় সংকোচনের কথা বলা হচ্ছিল তখনও ১৪৬ জনের বহর নিয়ে নিউইয়র্কে যায় বাংলাদেশ।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের সাধারণত অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক পৌঁছাবেন। প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করে ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এ বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চ-পর্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। তিনি বলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধান অংশগ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থানের বিবরণ এবং আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
তৌহিদ হোসেন জানান, প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সে বিবেচনায় নতুন করে কারও সঙ্গে বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে, আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ইতালির প্রেসিডেন্ট এবং কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের আলোচনা চলমান রয়েছে। এছাড়া চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো প্রত্যেকটি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুগুলোর ওপর যেসব ইভেন্ট আছে, বাংলাদেশ তার সব কটিতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে মনে করে।
তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে আশা করা যাচ্ছে।