• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চরম সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
চরম সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য

ওয়াল নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ চলমান অবস্থাতেই তীব্রতর হচ্ছে ইসরাইল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংঘর্ষ। লেবাননজুড়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইসরাইলকে ‘সাজা’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। এ হুমকির দিনই গোষ্ঠীটির ওপর সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে যে কোনো সময় মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে চরম সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসরাইলের তীব্র বিমান হামলার পর লেবাননে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা। এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স। এদিকে বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার মধ্যে গত বছর থেকে এ অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল ইসরাইল ও হিজবুল্লাহ। এরই মধ্যে গত মঙ্গল ও বুধবার লেবাননজুড়ে পেজার (যোগাযোগ যন্ত্র), ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে হিজবুল্লাহ সদস্যসহ ৩৭ জন নিহত হন। আহত হন তিন হাজারের বেশি মানুষ। এরপর বৃহস্পতিবার হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ডিভাইসে বিস্ফোরণের ঘটনার মধ্য দিয়ে সব চরম সীমা অতিক্রম করেছে ইসরাইল। এসব ঘটনার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে তিনি একে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে নাসরুল্লাহ স্বীকার করেছেন যে হিজবুল্লাহকে নজিরবিহীন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এবং এ ঘটনায় ‘ন্যায্য শাস্তি’ নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। লেবাননে পেজার, ওয়াকিটকিসহ হিজবুল্লাহদের ব্যবহৃত যোগাযোগের বিভিন্ন যন্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার পর এটি ছিল তার জনসম্মুখে দেওয়া প্রথম প্রতিক্রিয়া।
এদিকে বৃহস্পতিবারেই হিজবুল্লাহর প্রায় ১০০টি রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থায় নতুন করে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ৫২টি হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর আগে উত্তর ইসরাইলে দেশটির সামরিক স্থাপনাগুলোয় অন্তত ১৭টি হামলা চালানোর কথা জানায় হিজবুল্লাহ।
লেবাননের নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় দেশটিতে চারজন আহত হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কেউ হিজবুল্লাহ সদস্য কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট করা হয়নি। এদিকে গতকাল শুক্রবারও দক্ষিণ লেবাননের অন্তত তিনটি গ্রামে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হিজবুল্লাহ পরিচালিত আল-মানার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আজকের একটি হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়া উঠছে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উদ্বেগ : এর আগে ২০০৬ সালে ইসরাইল ও ইরানপন্থি হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এরপর গত এক বছর ধরে চলা দুই পক্ষের এ সংঘাতকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হচ্ছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারে ইসরাইলের হামলাকে সবচেয়ে তীব্র বলা হচ্ছে। এ দিনই ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবেন।
ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান এ সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে লেবাননে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল)। শুক্রবার সকালে তারা বলেছে, আগের ১২ ঘণ্টায় লেবানন-ইসরাইল সীমান্ত ও সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোয় ‘তীব্র লড়াই’ দেখা গেছে।
ইউএনআইএফআইএলের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া তেনেন্তি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ব্লু লাইন ঘিরে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে সংঘাত কমাতে আমরা সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যকার সীমান্তকে ‘ব্লু লাইন’ বলা হয়।
‘মধ্যপ্রাচ্যে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র’ : সংঘাত কমাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। এ সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে তারা। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘ইসরাইলের নিজেদের রক্ষার যে অধিকার রয়েছে, তার পক্ষে আমরা থাকব। তবে এই সংঘাত কোনো পক্ষ বাড়িয়ে দিচ্ছে; এমনটি আমরা দেখতে চাই না।’
এদিকে বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার মধ্যে গত বছর থেকে এ অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিত্রদের সুরক্ষা দেওয়া এবং নিজেদের ওপর হামলা ঠেকাতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০ হাজার সেনা, অন্তত এক ডজন যুদ্ধজাহাজ ও বিমানবাহিনীর চার স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা রয়েছে।
তবে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সাম্প্রতিক হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে আনুষ্ঠানিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এই মুহূর্তে (মধ্যপ্রাচ্যে) নিজেদের সেনাদের সুরক্ষা দিতে এবং দরকার পড়লে ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সক্ষমতা নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’