১৪৪ ধারা জারি
ওয়াল নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। একইদিন রাঙামাটিতে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই জেলা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ। নিহত ব্যক্তিরা হলেন, জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার সকালে চুরির অভিযোগে ‘গণপিটুনিতে’ মামুন নামে এক ব্যক্তির হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে লারমা স্কয়ারের দোকানপাটে আগুন দেয় একপক্ষ। এতে ৬০ থেকে ৭০টি দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি শহরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এর জের ধরে রাতে শহরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। রাতভর সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করে। ইন্টারনেট সেবা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে এলাকাটিতে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান শুক্রবার সকালে বলেন, রাতে গোলাগুলি হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে। মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থল দীঘিনালায় যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করব। একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের ৭৮টি ও বাঙালির সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে। ভাঙচুর হয় চারটি দোকান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মিলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন। প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
রাঙামাটিতে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫৩: রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন পাহাড়ি যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫৩ জন। নিহতেন নাম-ঠিকানা পায়নি পুলিশ ও রাঙামাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পুরো শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয়সহ, বনরুপা, দক্ষিণ কালিন্দপুর, বিজন সারণি, উত্তর কালিন্দপুর, হাসপাতাল এলাকাসহ একাধিক এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকদের বাইকসহ শতাধিক যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। রাঙামাটি জেলা মহিলাবিষয়ক কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় অফিসের যানবাহন।
এ ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি বহাল থাকবে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় পাহাড়িদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকালে রাঙামাটিতে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন মিছিল বের করে। মিছিলটি বনরুপা বাজারে পৌঁছালে পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদে হামলা করা হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর চড়াও হয়। বনরুপা বাজারে হামলা ও আগুন দেওয়া হয় একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এরপর পুরো শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্ন এলাকায় আহতের খবর পাওয়া গেলেও হাসপাতালে একজনের অজ্ঞাত লাশ আনা হয়েছে। চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে ১৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে জানিয়েছেন রাঙামাটি সদর হাসপাতালের আরএমও ডা শওকত আকবর খান।
এদিকে একাধিক এলাকায় আহতের খবর পাওয়া গেলেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছে না আহতরা।
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।
১৪৪ ধারা জারি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার বেলা ১টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি জারি থাকবে বলে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলছে, যেহেতু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে এবং জনগণের জান ও মাল ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আজ শুক্রবার বেলা ১টা থেকে রাঙামাটি জেলার পৌরসভা এলাকায় এবং বেলা ২টা থেকে খাগড়াছড়ি সদরে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৫৮ মোতাবেক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা মাঠে আছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিকেল ৪টায় সর্বজনীন মিটিং হয়েছে বলেও জানান তিনি।