• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীমঙ্গলে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪

ওয়াল নিউজ ডেস্ক


মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগের তীর শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীনের দিকে। প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে ৭ সেপ্টেম্বর রাত তিনটার দিকে সিলেটের অপর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। এ ঘটনা নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সর্বত্র চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ঘটনাটির সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা ডা. রোকসানা পারভীনের অনিয়ম ও কয়েক বছরে বেশ কিছু রোগি মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করেন।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন দুজনেই কর্মস্থলে আসেনি। নিহত গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা পরিবহন শ্রমিক মো. সুজনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটিকে (২৩) নিয়ে তার স্বজনরা ৭ সেপ্টেম্বর সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা. রোকসানা পারভীনের কাছে যান।
রোগীকে দেখে ডা. রোকসানা পারভীন আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে দুপুরের মধ্যে ওইসব পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে যাবার জন্য বলেন। ওই রোগীর স্বামী বেলা আড়াইটার দিকে সকল পরীক্ষার কাগজপত্র নিয়ে পুনরায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সময় শেষ হয়ে গেছে অজুহাতে ডা. রোকসানা পারভীন রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন।
নিহত বিউটির স্বামী মো. সুজন বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা না পেয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আমার স্ত্রী বিউটিকে শহরের ডাকঘর সড়কের শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করি। সেখানে ভর্তি করার পর দেখি আমার স্ত্রীর সিজার করার জন্য ডা. রোকসানা ও ডা. সাজ্জাদ আসেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পৌনে ৭টার দিকে আমার একটি কন্যা সন্তান প্রসব হয়। এর আধা ঘন্টা পর চিকিৎসকরা আমাকে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে যেতে বলেন। আমি সেখানে গিয়ে দেখতে পাই আমার স্ত্রীর পেট এমনভাবে কেটে রাখা হয়েছে যাতে মনে হয় কোন পশু জবাই করা হয়েছে। আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করি এমন অবস্থা কেন। তখন তারা আমাকে জানান রোগীর অবস্থা ভালো নয়, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে এখন সিলেটে নিয়ে যান। তাদের কথামতো ওই ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্সযোগে দ্রুত সিলেটস্থ রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। রাতে সেখানে যাবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে বলেন, রোগীকে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছে। মোট ৬ ব্যাগ রক্ত দিয়ে, সেলাই করে নানাভাবে চেষ্টা করেন রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাত ৩টার দিকে তারা আমার স্ত্রীর মৃত্যুর খবর আমাকে জানান।
সুজন মিয়া বলেন, রোববার আমি আমার স্ত্রীর মরদেহ শ্রীমঙ্গলে নিয়ে আসার পর বিকেল চারটায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করেছি। ডা. রোকসানা ও ডা. সাজ্জাদের ভুল সিজারে আমার স্ত্রী অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি আমার স্ত্রীর মৃত্যুর বিচার চাই।
শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকের পরিচালক দেবব্রত দত্ত হাবুল বলেন, আমাদের ক্লিনিকে সিজারের পর অবস্থা খারাপ হওয়ায় বিউটি নামের ওই রোগীকে সিলেট পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মারা গেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের ক্লিনিকের সকল পরিচালক আমাদের এমডি ডা. হরিপদ রায়ের বাসায় রোগীর স্বজনদের নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধানে চেষ্টা করা হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভীন বলেন, রোগী বেলা ১২টায় প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে আমাকে দেখাতে আসে। রোগীর স্বামী ও শাশুড়িকে বুঝিয়ে বললাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়ে এসে আমাকে রিপোর্ট দেখাতে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে রোগীর স্বজনরা টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে আসেন। তখন আমি তাদের বলি রোগীর অবস্থা ভালো না। আপনারা মৌলভীবাজার বা অন্য যে কোনো হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যান। বিকেল সাড়ে ৫টায় শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিক থেকে ফোন পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখতে পাই ওই রোগী। আমি সাথে সাথে রোগীর শাশুড়িকে ডেকে এনে বলেছি আমারতো অনেক সন্দেহ হচ্ছে। মনে হয় রোগীর জরায়ু ফেটে গেছে, বড় সমস্যা মনে হচ্ছে, আমি সিজার করবো না। আপনারা এই রোগী মৌলভীবাজার বা অন্য কোথায়ও নিয়ে যান। পরে রোগীর বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে। তখন রোগীর শাশুড়ি আমাকে বলেন, আল্লাহর হাওলা, রোগী মরলে মরবো, হায়াতের মালিক আল্লাহ। আপনি অপারেশন করেন। তারপরও আমি মানা করায় পেশেন্ট আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে মেডাম আমাকে বাঁচান। ওদেরকে আমি অনেক দিন থেকে বলতেছি আমাকে আনেও না, পরীক্ষাও করে না, ডাক্তারও দেখায় না। এখন আপনি পাঠিয়ে দিলে আমি আর বাঁচবো না। পরে সবার অনুরোধে অপারেশন করি, সুস্থ অবস্থায় নবজাতেরও জন্ম হয়। এরপর রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে সিলেট নিয়ে যেতে বলি। সেখানে রোগী মারা গেছেন। সিজারের পর আমরা অনেক চেষ্টা করেছি রোগীকে বাঁচাতে। কিন্তু আমাদের কারো কিছুই করার ছিল না।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ওই রোগীকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে আসার পর আমরা মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে দেই। পরে বিকেলে শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিকের ফোন পেয়ে সেখানের ওটিতে গিয়ে দেখি এই রোগিটাই ওখানে, তার অবস্থা খারাপ। ওখানেও আমরা মৌলভীবাজার নিয়ে যেতে বলি। তারপর রোগীর স্বজনদের বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা রোগিকে বাঁচাতে চেষ্টা করি।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। যদি চিকিৎসকের কোন ভুল বা ত্রুটি থেকে থাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।