ওয়াল নিউজ ডেস্ক
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) একযোগে পদত্যাগ করায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তবে নতুন ইসি গঠনের বিষয়ে এখনই কিছু ভাবছে না অন্তর্র্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। প্রয়োজনীয় সংস্কার করার পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হতে পারে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্র্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন সংস্কার করার কথা বলেছে। তবে কবে ও কীভাবে এই সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কবে নাগাদ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন কবে হবেÑএসব বিষয়ও পরিষ্কার নয়। অবশ্য গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদের একটি বৈঠকে একজন উপদেষ্টা এ বিষয়ে আলোচনা তুলেছিলেন। তবে সেটি খুব বেশি এগোয়নি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে নাকি আগে আইন সংস্কার করে পরে কমিশন গঠন করা হবে, সে সিদ্ধান্তও এখনো হয়নি।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন কমিশন গঠনের আগে নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত আইন সংস্কার করার চিন্তা অন্তর্র্বর্তী সরকারের মধ্যে আছে। এ-সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া করেছিল এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সেটি এখনো আছে। পাশাপাশি সুশাসনের জন্য নাগরিকও (সুজন) একটি খসড়া নিজেদের মতো করে তৈরি করেছিল। ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ এবং ওই খসড়াগুলো পর্যালোচনা করে, অংশীজনদের মতামত নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন একটি আইন (অধ্যাদেশ) করা হতে পারে। এই খসড়াগুলো সংগ্রহ করছে আইন মন্ত্রণালয়।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন সংস্কার করলেই হবে না। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার, ইসির আইনি ক্ষমতা বাড়ানো এবং ইসিকে আসলেই একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান করতে হলে কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন হবে। এসব সংস্কার কি সরকার সরাসরি নিজেরা করবে, নাকি নতুন একটি কমিশন গঠনের পর তারা এসব বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি করবে, সেটিও বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। নির্বাচনবিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, আইন সংস্কার করার পরই নতুন ইসি গঠন করা প্রয়োজন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান লম্বা সময় ধরে শূন্য রাখা ঠিক হবে না।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কশিনার নিয়োগ নিয়ে এখনো উপদেষ্টারা আলোচনা করেননি। অনেক কাজ অগ্রাধিকারে আছে। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সেই তালিকায় নেই। যখন নিয়োগ করা হবে, তখন সিদ্ধান্ত হবে কোন আইনে নিয়োগ বা নতুন আইন করা হবে কি না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দৈনন্দিন কাজ সচিব (নির্বাচন কমিশন সচিবালয়) চালিয়ে নিতে পারবেন।
এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদ থেকে কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে তাঁর অন্য চার সহকর্মী একযোগে পদত্যাগ করেন। ফলে নির্বাচন কমিশন এখন শূন্য। কত দিনের মধ্যে এই শূন্যতা পূরণ করতে হবে, তার কোনো বাধ্যবাধকতা আইনে নেই। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বলা আছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ সম্পর্কে বলা থাকলেও কোনো পদ শূন্য হওয়ার কত দিনের মধ্যে তা পূরণ করতে হবে, সে বিষয়ে কিছু নেই। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ’ আইনেও এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।
অবশ্য বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশন শূন্য থাকার নজির আছে। ২০০৭ সালে বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের পর সপ্তাহখানেক ইসি শূন্য ছিল। ২০২২ সালে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার পর প্রায় ১২ দিন শূন্য ছিল নির্বাচন কমিশন।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাময়িকভাবে এখানে শূন্যতা থাকতে পারে, তবে সেটি দীর্ঘায়িত করা ঠিক হবে না। তিনি মনে করেন, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ ব্যবস্থায় কমিশন গঠন করা যেতে পারে। নতুন কমিশন এসে তারাও আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারে।
বর্তমান সংবিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সর্বোচ্চ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলা আছে। সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে একটি আইন করার কথাও বলা আছে। ২০২২ সালে এই আইন করে আওয়ামী লীগ। এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০২২ সালে ইসি গঠনের জন্য যে আইন করা হয়, সেটি ছিল মূলত আগের দুটি কমিশন যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ করা হয়েছিল, তারই আইনি রূপ। এই আইন নিয়ে সংসদে ও সংসদের বাইরে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক হয়।