• ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ

The Wall News.Com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ

যুদ্ধক্ষেত্রে ভয়ংকর অস্ত্র ‘ড্রাগন ড্রোন’

ওয়াল নিউজ ডেস্ক

রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘ড্রাগন ড্রোন’ ব্যবহার শুরু করেছে ইউক্রেন। এ ড্রোনে ব্যবহার করা হয় অ্যালুমিনিয়াম গুঁড়া ও আয়রন অক্সাইডের উত্তপ্ত মিশ্রণ, যা থার্মাইট নামে পরিচিত। এটি ৪ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট (২ হাজার ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় পুড়তে থাকে। গাছ বা রুশ সেনাদের গোপন আশ্রয়স্থল পুড়িয়ে দিতে এ ড্রোন ব্যবহার করছে ইউক্রেন।
ড্রাগন ড্রোন মূলত পুরোনো যুদ্ধাস্ত্রের নতুর রূপ। থার্মাইট প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ংকর প্রভাব ফেলেছিল। ড্রোনের সঙ্গে থার্মাইট ব্যবহার করে একে ড্রাগন ড্রোন তৈরি করা হয়েছে।
ভয় ধরাতে ড্রোন ব্যবহার করা বেশ উদ্ভাবনী। কিন্তু এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার শারীরিক ক্ষতির চেয়ে মানসিক ক্ষতির কারণ হয় বেশি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ড্রোন ব্যবহারের বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামেও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত বুধবার এ ড্রোনের ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, এ ড্রোন তুলনামূলকভাবে কম উচ্চতায় ওড়ে ও আগুনের বৃষ্টি ঝরায়। গলিত লোহা যখন ড্রোন থেকে পড়তে থাকে, তখন একে মনে হয় পৌরাণিক কাহিনির ড্রাগনের মতো মুখ দিয়ে আগুন ঝরাচ্ছে। তাই এ ড্রোনের নাম দেওয়া হয়েছে ড্রাগন।
ইউক্রেনের ৬০তম মেকানাইজড ব্রিগেড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছে, ‘স্ট্রাইক ড্রোন আমাদের প্রতিশোধের ডানা। সরাসরি আকাশ থেকে আগুন নিয়ে আসে। এ ড্রোন আমাদের শত্রুদের জন্য সত্যিকারের হুমকি হয়ে এসেছে। এ ড্রোন শত্রুর অবস্থান এমন নিখুঁতভাবে পুড়িয়ে দেয়, যা অন্য কোনো অস্ত্রে অর্জন করা যায় না।’
প্রতিরক্ষাশিল্প বিশ্লেষক ও সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা নিকোলাস ড্রামন্ডের মতে, ভয় সৃষ্টি করা সম্ভবত ইউক্রেনের থার্মাইট ড্রোনের প্রধান প্রভাব। এটা খুব বাজে জিনিস। ভয় ধরাতে ড্রোন ব্যবহার করা বেশ উদ্ভাবনী। কিন্তু এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার শারীরিক ক্ষতির চেয়ে মানসিক ক্ষতির কারণ হয় বেশি।
নিকোলাস ড্রামন্ড বলেন, ‘আমি বুঝি, ইউক্রেনের থার্মাইট প্রভাব দেওয়ার সীমিত ক্ষমতা আছে। তাই একে মূলধারার অস্ত্রের পরিবর্তে একটি বিশেষ ক্ষমতা বলা যেতে পারে।’ তবে তিনি থার্মাইটের ফলে সৃষ্ট ভীতির কথা স্বীকার করেন।
থার্মাইট যেকোনো জিনিস খুব সহজেই পোড়াতে পারে। যেকোনো ধাতব পদার্থও এটি পুড়িয়ে দেয়। এ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
জার্মানির একজন রসায়নবিদ ১৮৯০ সালে থার্মাইট আবিষ্কার করেন। এটি রেলপথ ঢালাই করতে ব্যবহার করা হতো; কিন্তু পরে সামরিক কাজেও ব্যবহার শুরু হয়। মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা হিসেবে থার্মাইট ব্যবহার করত জার্মানরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও জার্মানি ও তার মিত্ররা বোমা হিসেবে থার্মাইট ব্যবহার করে শত্রুদের অস্ত্র গলিয়ে ফেলত। যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিরোধী সংস্থা অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্সের (এওএভি) মতে, এ আগে রুশ ট্যাঙ্ক অচল করার কাজে থার্মাইট ড্রোন ব্যবহার করেছিল ইউক্রেন। থার্মাইটের নিখুঁত ক্ষমতা ও প্রচলিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এড়ানোর মতো ড্রোনের ক্ষমতা একসঙ্গে যুক্ত হওয়ায় থার্মাইট বোমাকে আধুনিক যুদ্ধে একটি অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার করে তুলেছে।
থার্মাইট হলো একধরনের অগ্নিসংযোগকারী অস্ত্র। এ ধরনের অন্য অস্ত্র হচ্ছে ন্যাপাম ও সাদা ফসফরাস। জাতিসংঘরে নিরস্ত্রীকরণ কার্যালয় বলছে, অগ্নিসংযোগকারী অস্ত্র ব্যাপক ধ্বংস ও পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের রাজধানী টোকিওয়ে নাপাম বোমা ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ভিয়েতনামেও এ অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধের নিয়মানুযায়ী, সামরিক লড়াইয়ে থার্মাইট ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়; কিন্তু এর প্রভাবের কারণে বেসামরিক কোনো লক্ষ্যবস্তুতে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। মানুষের শরীরের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে অভিযানের নির্দেশ দেন। এর পর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার লড়াই চলছে। ইউক্রেন ইতিমধ্যে সেনাসংখ্যা ও অস্ত্রশস্ত্রে রাশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে এবং ছোট ছোট ড্রোন থেকে শুরু করে হাতুড়ির মতো নানা উদ্ভাবনী অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ইউক্রেন এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করলেও দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র পাল্টানোর সম্ভাবনা নেই।
ড্রামন্ড বলেন, ইউক্রেন যদি সত্যিকারের প্রভাব অর্জন করতে চায়, তাদের কুরস্কে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করে চাপ দিতে হবে। এর পাশাপাশি থার্মাইট রুশ সেনাদের মনে ভয় সৃষ্টি করবে। থার্মাইট তাদের চাপে রাখবে।